ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশকে বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভুয়া ইউএনও গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোড সময় : ১১:৪৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩
  • / ৩৭১ বার পড়া হয়েছে

পুলিশকে বোকা বানিয়ে বগুড়া শহরের দুটি হোটেলমালিকের কাছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ী পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ সময় তাঁর সহযোগী এক কিশোরকে (১৬) গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম তুহিন মিয়া (৩৫)। তিনি কখনো নিজেকে ইউএনও, কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, আবার কখনো পুলিশের উচ্চ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। দেশজুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে একের পর এক মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি।
সর্বশেষ সপ্তাহখানেক আগে বগুড়া শহরের দুটি হোটেলমালিকের কাছে ইউএনও পরিচয় দিয়ে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তুহিন মিয়া। প্রতারণার বিষয়টি জানাজানির পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ইউএনও পরিচয়ে মোবাইলে কোনো টাকা লেনদেন না করার পরামর্শ দেন। জেলা পুলিশ সুপার কথিত সেই ভুয়া ইউএনওকে ধরতে গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) মাঠে নামান। শেষ পর্যন্ত কথিত সেই ইউএনওকে গ্রেপ্তার করা হলো।
বগুড়া জেলা ডিবির পরিদর্শক সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুহিন মিয়া স্বীকার করেছেন, বিভিন্ন সময় ভুয়া পরিচয়ে তিনি বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের ভাগ দিতেন তাঁর সহযোগী কিশোরকে। দেশজুড়ে বিস্তৃত তাঁর প্রতারণার নেটওয়ার্ক। এ পর্যন্ত ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর, জামালপুর, লক্ষ্মীপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন তিনি।
নতুন করে বগুড়া সদর থানায় দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তুহিন মিয়াকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির উপরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, তুহিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা বিচারাধীন আছে।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন সকাল নয়টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল করে বগুড়া সদর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চান তুহিন মিয়া। তুহিন মিয়া নিজেকে বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও পরিচয় দিয়ে বলেন, শহরের নামাজগড় এলাকায় একটি সমস্যা হয়েছে, পুলিশের টহল দল যেন তাঁর সঙ্গে কথা বলে। ওই উপপরিদর্শক তাৎক্ষণিক ফোন নম্বরটি উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির টহল দলের একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলতে বলেন। পুলিশ ফাঁড়ির ওই কর্মকর্তা কল করলে তুহিন মিয়া বলেন, উপশহর এলাকার খাবারের হোটেলমালিকদের সঙ্গে জরুরি বিষয়ে কথা বলতে হবে। এ জন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে হোটেলে গিয়ে মালিকের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিতে বলেন। ইউএনওর নির্দেশ ভেবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা উপশহর বাজারের শাহিন হোটেলে গিয়ে মালিকের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দেন অপর প্রান্তে থাকা তুহিন মিয়াকে। এ সময় কথিত ইউএনও তুহিন কৌশলে হোটেলমালিকের কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর নেন। এরপর পুলিশ কর্মকর্তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে কিছুক্ষণ পর হোটেলমালিক মো. শাহিন মিয়াকে কল করেন। শাহিনকে এ সময় তুহিন বলেন, সরকারি নির্দেশে উপশহর এলাকায় সব হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং একটি হোটেল খোলা থাকবে। হোটেল খোলা রাখতে হলে সরকারি ফি বাবদ ২০ হাজার টাকা এখনই মুঠোফোনে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিতে হবে। পরে শাহিন মিয়া ১০ হাজার টাকা পাঠান।
হোটেলমালিক শাহিন মিয়া বলেন, ইউএনও পরিচয়ে হোটেল বন্ধ করার কথা বলায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নগদ অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠান। কিছুক্ষণ পর একই কৌশলে পাশের আরেকটি হোটেলের মালিক রবিউল ইসলামের কাছ থেকেও নগদ অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর খোঁজখবর নিয়ে তারা নিশ্চিত হয়, সদর ইউএনও কাউকে ফোন দেননি, যে নম্বর থেকে ফোন করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটি ইউএনওর ফোন নম্বর নয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করা হয়।
ডিবি পরিদর্শক সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, উপশহর এলাকায় পুলিশকে ব্যবহার করে ইউএনও পরিচয়ে হোটেলমালিকের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী দ্রুত প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করার নির্দেশ দেন। চক্রটি ধরতে সোমবার রাতভর বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ী পশ্চিমপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ভোর চারটার দিকে তুহিন মিয়া এবং তাঁর সহযোগী কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা দুজনই প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

পুলিশকে বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভুয়া ইউএনও গ্রেপ্তার

আপলোড সময় : ১১:৪৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩

পুলিশকে বোকা বানিয়ে বগুড়া শহরের দুটি হোটেলমালিকের কাছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ী পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ সময় তাঁর সহযোগী এক কিশোরকে (১৬) গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম তুহিন মিয়া (৩৫)। তিনি কখনো নিজেকে ইউএনও, কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, আবার কখনো পুলিশের উচ্চ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। দেশজুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে একের পর এক মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি।
সর্বশেষ সপ্তাহখানেক আগে বগুড়া শহরের দুটি হোটেলমালিকের কাছে ইউএনও পরিচয় দিয়ে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তুহিন মিয়া। প্রতারণার বিষয়টি জানাজানির পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ইউএনও পরিচয়ে মোবাইলে কোনো টাকা লেনদেন না করার পরামর্শ দেন। জেলা পুলিশ সুপার কথিত সেই ভুয়া ইউএনওকে ধরতে গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) মাঠে নামান। শেষ পর্যন্ত কথিত সেই ইউএনওকে গ্রেপ্তার করা হলো।
বগুড়া জেলা ডিবির পরিদর্শক সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুহিন মিয়া স্বীকার করেছেন, বিভিন্ন সময় ভুয়া পরিচয়ে তিনি বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের ভাগ দিতেন তাঁর সহযোগী কিশোরকে। দেশজুড়ে বিস্তৃত তাঁর প্রতারণার নেটওয়ার্ক। এ পর্যন্ত ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর, জামালপুর, লক্ষ্মীপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন তিনি।
নতুন করে বগুড়া সদর থানায় দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তুহিন মিয়াকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির উপরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, তুহিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা বিচারাধীন আছে।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন সকাল নয়টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল করে বগুড়া সদর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চান তুহিন মিয়া। তুহিন মিয়া নিজেকে বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও পরিচয় দিয়ে বলেন, শহরের নামাজগড় এলাকায় একটি সমস্যা হয়েছে, পুলিশের টহল দল যেন তাঁর সঙ্গে কথা বলে। ওই উপপরিদর্শক তাৎক্ষণিক ফোন নম্বরটি উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির টহল দলের একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলতে বলেন। পুলিশ ফাঁড়ির ওই কর্মকর্তা কল করলে তুহিন মিয়া বলেন, উপশহর এলাকার খাবারের হোটেলমালিকদের সঙ্গে জরুরি বিষয়ে কথা বলতে হবে। এ জন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে হোটেলে গিয়ে মালিকের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিতে বলেন। ইউএনওর নির্দেশ ভেবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা উপশহর বাজারের শাহিন হোটেলে গিয়ে মালিকের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দেন অপর প্রান্তে থাকা তুহিন মিয়াকে। এ সময় কথিত ইউএনও তুহিন কৌশলে হোটেলমালিকের কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর নেন। এরপর পুলিশ কর্মকর্তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে কিছুক্ষণ পর হোটেলমালিক মো. শাহিন মিয়াকে কল করেন। শাহিনকে এ সময় তুহিন বলেন, সরকারি নির্দেশে উপশহর এলাকায় সব হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং একটি হোটেল খোলা থাকবে। হোটেল খোলা রাখতে হলে সরকারি ফি বাবদ ২০ হাজার টাকা এখনই মুঠোফোনে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিতে হবে। পরে শাহিন মিয়া ১০ হাজার টাকা পাঠান।
হোটেলমালিক শাহিন মিয়া বলেন, ইউএনও পরিচয়ে হোটেল বন্ধ করার কথা বলায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নগদ অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠান। কিছুক্ষণ পর একই কৌশলে পাশের আরেকটি হোটেলের মালিক রবিউল ইসলামের কাছ থেকেও নগদ অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর খোঁজখবর নিয়ে তারা নিশ্চিত হয়, সদর ইউএনও কাউকে ফোন দেননি, যে নম্বর থেকে ফোন করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটি ইউএনওর ফোন নম্বর নয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করা হয়।
ডিবি পরিদর্শক সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, উপশহর এলাকায় পুলিশকে ব্যবহার করে ইউএনও পরিচয়ে হোটেলমালিকের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী দ্রুত প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করার নির্দেশ দেন। চক্রটি ধরতে সোমবার রাতভর বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ী পশ্চিমপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ভোর চারটার দিকে তুহিন মিয়া এবং তাঁর সহযোগী কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা দুজনই প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন