মাদক সম্রাট সেলিম বেপারী জামিনে বের হয়ে আবারো মাদকের সয়লাব
- আপলোড সময় : ১১:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৫১৯ বার পড়া হয়েছে
নারায়ণগঞ্জ জেলার মাদকের হট স্পট সোনারগাঁ থানার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা সহ যে কোনো মাদক, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে, জোয়ান বুড়া, শিক্ষিত -অশিক্ষিত, ব্যবসায়ী- চাকরিজীবী, আইন-শৃঙ্খলা সদস্য সহ স্কুল কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্রদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে এই সর্বনাশা মাদক।
মাদক সেবন মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন মাদক সেবনে শরীর দুর্বল হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। স্বাভাবিক যৌনশক্তি হারিয়ে যায়।
সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নে পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদকদ্রব্য। মরণনেশা ইয়াবায় ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে ওঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল-কলেজের ছাত্র, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। এতে করে উপজেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় ওঠতি তরুণ ও যুবক ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বন্দেরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে বহুল আলোচিত মাদকসম্রাট একাধিক মাদক মামলার প্রধান আসামি সেলিম বেপারী (৪০) নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির হাতে ৪৮ টি ফেনসিডিল মামলার যামিনে বের হয়ে আবারও বেপরোয়া। ছড়িয়ে সিটিয়ে দিচ্ছে সোনারগাঁও উপজেলার বিভিন্ন পাড়ামহল্লায়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য মাদকের হটস্পট মোগলাপাড়া ইউনিয়নের বন্ধেরা গ্রাম, বাড়ি মজলিস, গুহাট্টা, বাড়ি চিনিষ, কালাদরগাহ, পাঁচপীর দরগাহ, সোনাখালী, কাবিলগঞ্জ, ঋষিপাড়া, কাবিলগঞ্জ, পিরোজপুর সহ সারা সোনারগাঁয়ে সেলিম বেপারীর মাদকের গরম বাণিজ্য।
প্রশাসনের নাকের ডগায় এই মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা করছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরাও জড়িত। আর প্রভাবশালীদের কারণেই প্রশাসনও রয়েছে ‘নীরব’। পুলিশ রাজনৈতিক দলের কর্মীকে ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার করলে সঙ্গে সঙ্গে তদবির শুরু করে দেয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা। মাদকদ্রব্যের মামলায় মাদক ব্যবসায়ীদের আদালতে চালান দেয়ার কিছুদিন পর জামিনে এসে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দুর্বলের কারণে আসামিরা ছাড়াও পেয়ে যায়। ফলে উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।প্রতিদিন বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়িমজলীশ গ্রাম সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা মাদকের আখড়া বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, এই ইউনিয়নের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। তা ছাড়া মাদকের ব্যবসায় লগ্নি আছে বেশ কয়েকজনের। মূলত প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির টাকায় কেনা হয় মাদক। আর ডেলিভারি ম্যানের সাহায্যে মাদক বিক্রি হয় সোনারগাঁও ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। আর ‘ইয়াবা’ ‘গাঁজা’র দাম তুলণামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে নজর ও আকৃষ্ট সবার।
উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের, বাড়িমজলীশ গ্রামের লালা পাড়া, বন্দেরা গ্রাম, গোহাট্রা, বাড়ি চিনিষ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। এসব এলাকায় সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা বিক্রেতাদের দেখা যায়। এ ছাড়া উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ফেনসিডিল, গাঁজা ও মদের ব্যবসা করতেন গুটিকয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। তাও খুব গোপনে বেচাকেনা হতো। এখন গাঁজা-মদের পাশাপাশি চলছে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবসা। যা প্রকাশ্যে বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা । শুধু তাই নয়, এসব ইয়াবার ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন উপজেলার নামী-দামি পরিবারের অনেকে। যাদের প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। স্থানীয়রাও ভয়ে কেউ এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ক্ষমতাধর এসব মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই অল্পবয়সী। এরা মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত একথা শুনলে কেউ বিশ্বাসও করবে না। কারণ এরা সবাই ভালো পরিবারের সন্তান। প্রতিদিন সকাল বেলা উন্নতমানের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হয়, আর রাতে বাড়িতে ফেরে। পোশাকধারী এসব যুবকদের পকেটে থাকে ইয়াবা ট্যাবলেট যা প্রকাশ্যে হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে পরিচিত মাদক সেবনকারীদের কাছে। এ কারণে এসব আল্পবয়সী মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছে না পুলিশ।
মাদকের নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের অল্পবয়সী যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। নতুন নতুন এসব মাদক ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে বাড়ছে মাদক সেনবকারীর সংখ্যা। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক তুলে দিচ্ছে ওঠতি বয়সী যুবকদের হাতে। যার মধ্যে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। মা-বাবার চোখের সামনে মাদকাসক্ত হচ্ছে ছেলে। এ কষ্ট কিভাবে মেনে নেবে অভিভাবকরা। তাই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরে বাবা-মা।
স্থানীয়রা বলেন, দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে যুব সমাজ ধংস হবে।চুরি ছিনতাই,খুন অপরাধ বেড়ে যাবে।আর এ জন্য পুলিশকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে হবে। এবং অভিয়ান পরিচালনা করে মাদক ব্যাবসায়ীদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেলিম ব্যাপারীর মতো মাদকসম্রাটদের নির্মূল করতে হবে অন্যথায় আরো হাজারো সেলিম বেপারী সোনারগাঁয়ে তৈরি হবে।