নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব, আমন কাটায় ব্যস্ত কৃষক
- আপলোড সময় : ০২:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩
- / ৩৮৩ বার পড়া হয়েছে
দিনাজপুরের খানসামায় ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা। এই হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন হেমন্ত ঋতুর। মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সোনালী হলুদপাতা, আর বাতাসে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। হলুদ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। কেউ আবার আগাম ঘরে তুলছে সোনালী আমন ধান। তবুও নেই, নবান্ন উৎসব। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সোনালী ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন অনেক আমন চাষীরা। গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন। এ নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক এক উৎসব। আশ্বিনের শেষে ও কার্তিকের শুরুতে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন। কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের স্বর্ণালী দিন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে অথচ আজকের গ্রাম-বাংলার শিশুরা যেন স্বপ্নের মধ্যে নবান্নের উৎসবের ইতিকথা বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদীর মুখে মুখে শুনে বিশেষ করে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এই নবান্ন উৎসবে। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস এলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যেত যে নবান্ন আসছে। গ্রাম-বাংলায় বসত পালাগান, লোকনাট্য, কেচ্ছা-কাহিনী, ভাওয়াইয়া গান, লালনগীতি ও বাউল গানের আসর। নাচ আর গানে মুখরিত হতো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল। বাংলাদেশে বর্তমান পালাগান আর বাউল গানের আসর বিলুপ্ত প্রায়। অপসংস্কৃতি, ফেসবুক, ইউটিউব ও ধর্মীয় প্রচারের নামে নারীদের ভোগপিপাসা অথবা পণ্যের সঙ্গে করা হচ্ছে তুলনা। আর তেমন চোখে পড়ে না, নবান্ন উৎসবের সেই নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পাটিসাপ্টা, ভাপা পিঠা, পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন। তবে বর্তমানে আমনের জায়গা দখল করেছে আউশ-বোরো ধান। বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান বাজারে আসায় নতুন ধানের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে ওইসব ধান উৎপন্ন হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐত্যিবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে বলেও মনে করেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি হয়েছে এবার।
উপজেলার বাসুলী গ্রামের কৃষক ইউসুফ, বাবর আলী, নূর ইসলামসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে বললে তারা জানায়, এবার ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে হয়েছে। যার খরচ বেশি হয়। আশা করছি ভাল ফলন হলে পুষিয়ে নিতে পারবো।
গোবিন্দপুর গ্রামের লিটন নামে এক কৃষক জানান, আগের মত আর নবান্ন নেই। ছোটবেলায় আমন ধান কাটলে শুরু হয় পিঠা খাওয়ার ধুম। আমি ধান আবাদ করলেও সেই আমেজ নেই।
জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের কৃষক খলিল বলেন, ‘হামরা ধান কাটা শুরু করেছি। ধান তো ভালই হইছে, দাম যে কেমন পাই। নবান্ন আর নাই ভাইরে! সেই আর এই দিন মেল্লা তফাৎ।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলায় রোপা আমন ধান কাটা শুরু করেছে। অনেকেই ধান ঘরে তুলেছেন। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় আমন ক্ষেতে গত বছরের থেকে এবার রোগবালাই কম। আমরা আশা করছি কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পাবে।