নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ নেতা সন্ত্রাসী মতিউর রহমান মতির সকল অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য বর্তমানে মহানগর ছাত্রদল নেতা রাকিবুর রহমান সাগরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে সন্ত্রাসী মতিউর রহমান মতির অপকর্মের এই সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নিতে সকল ধরনের সহযোগিতা করেছেন মতির ভাগিনা মামুন ওরফে ভাগিনা মামুন।
নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা রাজাকারের ছেলে। দুর্নীতির দায়ে দুদকের দায়ের করা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি এই মতি।
এদিকে ছাত্র বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী-সমর্থক দেশ ছেড়েছেন।
শেখ হাসিনা পালানোর পরপরই নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমানও পরিবার নিয়ে গা ঢাকা দেন। এ খবর পেয়ে মতি ও তার সহযোগীরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে মতিউর রহমান মতির অফিস ভাংচুর করেন।
জানা গেছে, সন্ত্রাসী শামীম ওসমানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের রাজাকারপুত্র সাবেক যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি। সকল অপকর্মের হোতা ছিলেন মতিউর রহমান মতি। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে মতির থাবা পরেনি। অবৈধভাবে উপার্জন করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই মতি। সকল সেক্টরে নিজের প্রভাব খাটিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। ছাড় দেয়নি ভাগিনা মামুনও। মামার জোর খাটিয়ে আদমজী ইপিজেড থেকে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন শতশত কোটি কোটি টাকা। অল্প সময়ে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছেন মামুন ওরফে ভাগিনা মামুন। অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মামুন।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মতিসহ তার সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও দূর থেকে পূর্বের অপরাধ সাম্রাজ্য ফের আগের মতোই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মতি ও তার সহযোগীদের সহায়তায় মতির অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মহানগর ছাত্রদল নেতা রাকিবুর রহমান সাগর। সাগর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার গলা কাটা কাশেমের ছেলে। এই সাগরের সাথে পূর্ব থেকেই ভালো সখ্যতা ছিলো সাবেক যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতির ভাগিনা মামুনের সঙ্গে।

জানা গেছে, গত ২৮ আগষ্ট ভাগিনা মামুনের সহয়তায় সাগর অনেকটা জোরপূর্বকই আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত অনন্ত অ্যাপারেলস থেকে ওয়েস্টিজ মালামাল নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাছাড়া আরও ৮-১০ টি পোশাক কারখানার ওয়েস্টিজ মালামাল নামানোর নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা ভাগিনা মামুন ও ছাত্রদল নেতা সাগর। এ নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, প্রায় সতেরো বছর ধরে ক্ষমতার বাহিরে বিএনপি। দলের জন্য কতটা নির্যাতন ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে সেটা আমরা জানি। এখন সবাই নেতা হয়ে গেছে। আসলে যেকোনো দলেই ত্যাগীদের মূল্যায়ন কম। তা নাহলে সাবেক যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতির মতো একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনদের নিয়ে একজন ছাত্রদল নেতা কিভাবে ইপিজেডের সামনে মহড়া দেয়। শুনেছি ইপিজেডের ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হুমকিও দিয়ে এসেছে ছাত্রদল নেতা সাগর ও সাবেক যুবলীগ নেতা মতির সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনি আরও বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে দলের নাম বিক্রি করে কেউ যদি কোনো প্রকার লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয় এমনকি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে দল তার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সে যেই হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, শুনেছি ছাত্রদল নেতা সাগর সাবেক যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতির লোকজনের সাথে আঁতাত করে ইপিজেডে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। যদি এমনটা হয় তাহলে দলের হাইকমান্ড তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুদের ঠাই নেই। যারা অন্যের জিনিস লুটপাট করে তারা কখনো বিএনপির কর্মী নয় বলে দাবি তার।
বিষয়টি অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রদল নেতা রাকিবুর রহমান সাগর বলেন, দীর্ঘ সতেরো বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিলাম। আমার সাথে এগুলো (মতির বাহিনীর সাথে আতাত করে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ) যায়না। আমার নামে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। আমি এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নই।