ঢাকা ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসকন বাংলাদেশে: একটি ধর্মীয় সংগঠন নাকি সমাজিক সংঘাত তৈরির হাতিয়ার?

আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
  • আপলোড সময় : ০১:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২৪৬ বার পড়া হয়েছে

ইসকন বাংলাদেশে: একটি ধর্মীয় সংগঠন নাকি সমাজিক সংঘাত তৈরির হাতিয়ার?

ইসকন, যা 1966 সালে নিউইয়র্কে “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” (ISKCON) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটি বিতর্কিত সংগঠন। বাংলাদেশে, যদিও এটি নিজেকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করে, অনেকেই মনে করেন যে ইসকন আসলে সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করতে চায়, বিশেষত মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে।

ইসকন বাংলাদেশে: শুরু এবং বিতর্ক

প্রথমে ইসকনকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে দেখা হয়েছিল, যা হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রীয় উপাদান প্রচার করতে চায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, বাংলাদেশে ইসকনকে ঘিরে নানা বিতর্ক এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে, যার ফলে এর উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। ইসকন প্রতিষ্ঠাতা “স্বরূপ প্রভুপাদ” (স্বামী প্রভুপাদ) ছিলেন একজন ভারতীয় গুরূ, তবে তিনি নিজে কোনো হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ করেননি, বরং খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর এই পটভূমি বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই ইসকন সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

ইসকন এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা

বাংলাদেশে ইসকনের বিরুদ্ধে কিছু ঘটনা খারাপভাবে প্রভাব ফেলেছে, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, 2009 সালে “রশিক রায় জিউ মন্দির”-এ দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইসকনভক্ত ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহত হন, যার ফলে ইসকনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে। 2016 সালে, সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে মুসলিমদের উপর গুলি চালানোর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে একাধিক মুসলিম গুরুতর আহত হয়। এ ধরনের ঘটনা ইসকনকে আরও বিতর্কিত করেছে এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

ইসকন এবং ধর্মীয় উত্তেজনা

ইসকন যদিও নিজেদের একটি শান্তির ধর্ম প্রচারক সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করে, তাদের কার্যক্রমে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও, ইসকনের কিছু কর্মকাণ্ড এই সম্পর্ককে আঘাত করছে। উদাহরণস্বরূপ, 2014 সালে স্বামীবাগে ইসকন ভক্তরা মুসলিমদের রমজান মাসে তাম্বুলির নামাজে বাধা দিয়েছিল। 2019 সালে, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ইসকন কর্তৃক বিতরণ করা খাদ্যে “হরে কৃষ্ণ” মন্ত্র পড়ানো হচ্ছিল, যা মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

ইসকন: একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার?

ইসকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রসারের জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও কাজ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে, ইসকন কর্তৃক ধর্মীয় এবং সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা অনেকের নজরে এসেছে। অনেকের মতে, ইসকন ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু ধর্মের উগ্র সংস্করণ প্রচারের চেষ্টা করছে, যার ফলে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।

ইসকনের প্রসারের বিরুদ্ধে জনগণের আপত্তি

ইসকনের কার্যক্রম এবং সংগঠনটির উপর সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি অনেকের পক্ষ থেকে উঠেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, ইসকন বাংলাদেশে নিজের ধর্মীয় অভ্যুদয়ের জন্য কর্মসূচী চালাচ্ছে, কিন্তু এর বাস্তব উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম এর বাইরে হতে পারে। এর মাধ্যমে এটি শুধু হিন্দু ধর্মের প্রচারের জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করতে পারে।

ইসকন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড, বিশেষত মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি করার ঘটনা, দেশের সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপদজনক হতে পারে। এই ধরনের বিভাজনমূলক কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা এবং ধর্মীয় সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা দেশের নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিপন্ন করতে পারে। তাই অনেকেই মনে করেন যে, সরকারকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা উচিত, যাতে এই ধরনের বিভাজনমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা যায়।

নিষেধাজ্ঞা বা নজরদারি?

বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে সরকারের নিরীক্ষা বা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, ইসকন যদি সত্যিই উত্তেজনা সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে এর কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। সরকারের উচিত সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

উপসংহার

ইসকন বাংলাদেশে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সংগঠন নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন এবং সহিংসতা তৈরি হতে পারে, যা দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকি। তাই, ইসকনের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইসকন বাংলাদেশে: একটি ধর্মীয় সংগঠন নাকি সমাজিক সংঘাত তৈরির হাতিয়ার?

আপলোড সময় : ০১:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

ইসকন বাংলাদেশে: একটি ধর্মীয় সংগঠন নাকি সমাজিক সংঘাত তৈরির হাতিয়ার?

ইসকন, যা 1966 সালে নিউইয়র্কে “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” (ISKCON) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটি বিতর্কিত সংগঠন। বাংলাদেশে, যদিও এটি নিজেকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করে, অনেকেই মনে করেন যে ইসকন আসলে সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করতে চায়, বিশেষত মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে।

ইসকন বাংলাদেশে: শুরু এবং বিতর্ক

প্রথমে ইসকনকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে দেখা হয়েছিল, যা হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রীয় উপাদান প্রচার করতে চায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, বাংলাদেশে ইসকনকে ঘিরে নানা বিতর্ক এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে, যার ফলে এর উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। ইসকন প্রতিষ্ঠাতা “স্বরূপ প্রভুপাদ” (স্বামী প্রভুপাদ) ছিলেন একজন ভারতীয় গুরূ, তবে তিনি নিজে কোনো হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ করেননি, বরং খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর এই পটভূমি বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই ইসকন সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

ইসকন এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা

বাংলাদেশে ইসকনের বিরুদ্ধে কিছু ঘটনা খারাপভাবে প্রভাব ফেলেছে, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, 2009 সালে “রশিক রায় জিউ মন্দির”-এ দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইসকনভক্ত ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহত হন, যার ফলে ইসকনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে। 2016 সালে, সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে মুসলিমদের উপর গুলি চালানোর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে একাধিক মুসলিম গুরুতর আহত হয়। এ ধরনের ঘটনা ইসকনকে আরও বিতর্কিত করেছে এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

ইসকন এবং ধর্মীয় উত্তেজনা

ইসকন যদিও নিজেদের একটি শান্তির ধর্ম প্রচারক সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করে, তাদের কার্যক্রমে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও, ইসকনের কিছু কর্মকাণ্ড এই সম্পর্ককে আঘাত করছে। উদাহরণস্বরূপ, 2014 সালে স্বামীবাগে ইসকন ভক্তরা মুসলিমদের রমজান মাসে তাম্বুলির নামাজে বাধা দিয়েছিল। 2019 সালে, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ইসকন কর্তৃক বিতরণ করা খাদ্যে “হরে কৃষ্ণ” মন্ত্র পড়ানো হচ্ছিল, যা মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

ইসকন: একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার?

ইসকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রসারের জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও কাজ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে, ইসকন কর্তৃক ধর্মীয় এবং সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা অনেকের নজরে এসেছে। অনেকের মতে, ইসকন ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু ধর্মের উগ্র সংস্করণ প্রচারের চেষ্টা করছে, যার ফলে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।

ইসকনের প্রসারের বিরুদ্ধে জনগণের আপত্তি

ইসকনের কার্যক্রম এবং সংগঠনটির উপর সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি অনেকের পক্ষ থেকে উঠেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, ইসকন বাংলাদেশে নিজের ধর্মীয় অভ্যুদয়ের জন্য কর্মসূচী চালাচ্ছে, কিন্তু এর বাস্তব উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম এর বাইরে হতে পারে। এর মাধ্যমে এটি শুধু হিন্দু ধর্মের প্রচারের জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করতে পারে।

ইসকন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড, বিশেষত মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি করার ঘটনা, দেশের সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপদজনক হতে পারে। এই ধরনের বিভাজনমূলক কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা এবং ধর্মীয় সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা দেশের নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিপন্ন করতে পারে। তাই অনেকেই মনে করেন যে, সরকারকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা উচিত, যাতে এই ধরনের বিভাজনমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা যায়।

নিষেধাজ্ঞা বা নজরদারি?

বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে সরকারের নিরীক্ষা বা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, ইসকন যদি সত্যিই উত্তেজনা সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে এর কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। সরকারের উচিত সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

উপসংহার

ইসকন বাংলাদেশে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সংগঠন নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন এবং সহিংসতা তৈরি হতে পারে, যা দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকি। তাই, ইসকনের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন