ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বনানীতে সিসা লাউঞ্জে নারকোটিক্সের ‘মেগা রেইড’: উঠতি তারকা ও বিদেশিদের উপস্থিতি, মধ্যরাতে রঙ চড়ল উত্তেজনায়

রনি মজুমদার
রনি মজুমদার
  • আপলোড সময় : ০৪:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • / ৩২০ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর বনানীর অভিজাত এলাকায় সিসা লাউঞ্জের আড়ালে চলা মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারকোটিক্স) নেতৃত্বে পরিচালিত এক ‘মেগা রেইডে’ উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
এই অভিযান চালানো হয় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যা থেকে রাতভর।
অভিযানে মহাপরিচালক হাসান মারুফ স্বয়ং মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তার নেতৃত্বেই রাজধানীর অন্যতম কুখ্যাত সিসা লাউঞ্জ ‘হেইজ’ ও ‘সিগনেচার’-এ হানা দেয় নারকোটিক্সের বিশেষ দল।
‘হেইজ’-এ উঠতি তারকা ও বিদেশিদের আনাগোনা, ধরা না পড়লেও ছিল রেশ
বনানীর ১১ নম্বর রোডের হেইজ লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে পাওয়া যায়, সিসা ও মদের আসরে বেহুঁশ অবস্থায় শতাধিক তরুণ-তরুণী।
চিত্রজগতের উঠতি মডেল, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি চোখে পড়ে, যদিও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
একপর্যায়ে কয়েকজন বিদেশি নিজেদের একটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দূতাবাসের কর্মকর্তা দাবি করে উত্তেজক আচরণ শুরু করেন।
অভিযানের সময় এক অন্ধকার ঘরে তরুণীদের সঙ্গে কয়েকজন বিদেশিকে সিসা সেবনে দেখা যায় বলে জানায় নারকোটিক্সের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সিসা, মদ, হুঁকা ও নগদ অর্থ জব্দ ১২ জন মালিকের নামে মামলা
‘হেইজ’ লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে ২৬টি হুঁকা, সাত কেজি নিষিদ্ধ সিসা এবং মাদক বিক্রির নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ১২ জন মালিকের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো:

কাজী মোহাম্মদ সামি, নাজমুল সাকিল, চৌধুরী গোলাম আনাস, মোহাম্মদ আম্মার, মুফরাত হাসান ওরফে বান্টি, আহমেদ মোস্তফা ওরফে রাসেল, আরও ছয়জন
ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম (ওরফে জসিম) ও ইমরান হোসেন-কে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
‘সিগনেচার’ লাউঞ্জেও অভিযান, চারজন গ্রেফতার একই রাতে বনানীর ৫০ নম্বর বাড়ির ১৩ তলায় অবস্থিত ‘সিগনেচার লাউঞ্জ’-এ অভিযান চালায় নারকোটিক্স। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়: স্বপন মিয়া, শাকিল, সিয়াম, আ. রায়হান তারেক জামিল নামের একজন এখনো পলাতক। অভিযানে ৫ কেজি সিসা, ২০টি হুঁকা ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। সাহসিকতা ও নেতৃত্ব: নারকোটিক্স কর্মকর্তাদের জন্য কুর্নিশ
এই অভিযানে অংশ নেন নারকোটিক্সের সাহসী কর্মকর্তা ও সদস্যরা। তাদের মধ্যে ছিলেন: অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমেদ (পরিচালক, অপারেশন)

মোহাম্মদ বদরুদ্দীন (অতিরিক্ত পরিচালক, গোয়েন্দা) শামীম আহমেদ ও মানজুরুল ইসলাম (উপপরিচালক, ঢাকা মেট্রো উত্তর ও দক্ষিণ) সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ও আব্দুল হামিদ
এই অভিযানে তাদের সাহসিকতা, দায়িত্ববোধ এবং রাতভর পরিশ্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
তারা শুধু আইন প্রয়োগ করেননি, প্রভাবশালীদের চাপের মুখেও জনস্বার্থে অটল অবস্থান নিয়েছেন। সিসার ভয়াবহতা: স্বাস্থ্য ও সমাজ দুটোই হুমকির মুখে নারকোটিক্সের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা জানান,
সিসায় দুই শতাংশের বেশি নিকোটিন থাকলে তা মাদক হিসেবে চিহ্নিত হয়। লাউঞ্জগুলোতে উচ্চমাত্রার নিকোটিনযুক্ত সিসা পরিবেশন করা হচ্ছে, যা তরুণদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি: ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, মানসিক অবসাদ, আসক্তি সামাজিক বিপর্যয়: তরুণদের নৈতিক অবক্ষয় পারিবারিক বন্ধন দুর্বলতা অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি মহাপরিচালকের ঘোষণা: “মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ছাড় নেই নারকোটিক্স মহাপরিচালক হাসান মারুফ দৃঢ়ভাবে বলেন, সিসা লাউঞ্জগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা মনে করে ক্ষমতার জোরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাবে, তাদের জন্য এ অভিযান ছিল সতর্কবার্তা।
উপসংহার: শুরু হলো বদলের সময় এই অভিযান প্রমাণ করে দিয়েছে, যদি প্রশাসন চায়, তাহলে মাদকের শেকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব।
নারকোটিক্সের সাহসী এই পদক্ষেপে রাজধানীর অনেক চিহ্নিত মাদকচক্র গা ঢাকা দিয়েছে, আস্তানা বন্ধ করে পালিয়েছে।
এই উদ্যোগ শুধু একটি সফল অভিযান নয়, এটি জনগণের প্রত্যাশার প্রতীক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বনানীতে সিসা লাউঞ্জে নারকোটিক্সের ‘মেগা রেইড’: উঠতি তারকা ও বিদেশিদের উপস্থিতি, মধ্যরাতে রঙ চড়ল উত্তেজনায়

আপলোড সময় : ০৪:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

রাজধানীর বনানীর অভিজাত এলাকায় সিসা লাউঞ্জের আড়ালে চলা মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারকোটিক্স) নেতৃত্বে পরিচালিত এক ‘মেগা রেইডে’ উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
এই অভিযান চালানো হয় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যা থেকে রাতভর।
অভিযানে মহাপরিচালক হাসান মারুফ স্বয়ং মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তার নেতৃত্বেই রাজধানীর অন্যতম কুখ্যাত সিসা লাউঞ্জ ‘হেইজ’ ও ‘সিগনেচার’-এ হানা দেয় নারকোটিক্সের বিশেষ দল।
‘হেইজ’-এ উঠতি তারকা ও বিদেশিদের আনাগোনা, ধরা না পড়লেও ছিল রেশ
বনানীর ১১ নম্বর রোডের হেইজ লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে পাওয়া যায়, সিসা ও মদের আসরে বেহুঁশ অবস্থায় শতাধিক তরুণ-তরুণী।
চিত্রজগতের উঠতি মডেল, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি চোখে পড়ে, যদিও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
একপর্যায়ে কয়েকজন বিদেশি নিজেদের একটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দূতাবাসের কর্মকর্তা দাবি করে উত্তেজক আচরণ শুরু করেন।
অভিযানের সময় এক অন্ধকার ঘরে তরুণীদের সঙ্গে কয়েকজন বিদেশিকে সিসা সেবনে দেখা যায় বলে জানায় নারকোটিক্সের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সিসা, মদ, হুঁকা ও নগদ অর্থ জব্দ ১২ জন মালিকের নামে মামলা
‘হেইজ’ লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে ২৬টি হুঁকা, সাত কেজি নিষিদ্ধ সিসা এবং মাদক বিক্রির নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ১২ জন মালিকের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো:

কাজী মোহাম্মদ সামি, নাজমুল সাকিল, চৌধুরী গোলাম আনাস, মোহাম্মদ আম্মার, মুফরাত হাসান ওরফে বান্টি, আহমেদ মোস্তফা ওরফে রাসেল, আরও ছয়জন
ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম (ওরফে জসিম) ও ইমরান হোসেন-কে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
‘সিগনেচার’ লাউঞ্জেও অভিযান, চারজন গ্রেফতার একই রাতে বনানীর ৫০ নম্বর বাড়ির ১৩ তলায় অবস্থিত ‘সিগনেচার লাউঞ্জ’-এ অভিযান চালায় নারকোটিক্স। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়: স্বপন মিয়া, শাকিল, সিয়াম, আ. রায়হান তারেক জামিল নামের একজন এখনো পলাতক। অভিযানে ৫ কেজি সিসা, ২০টি হুঁকা ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। সাহসিকতা ও নেতৃত্ব: নারকোটিক্স কর্মকর্তাদের জন্য কুর্নিশ
এই অভিযানে অংশ নেন নারকোটিক্সের সাহসী কর্মকর্তা ও সদস্যরা। তাদের মধ্যে ছিলেন: অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমেদ (পরিচালক, অপারেশন)

মোহাম্মদ বদরুদ্দীন (অতিরিক্ত পরিচালক, গোয়েন্দা) শামীম আহমেদ ও মানজুরুল ইসলাম (উপপরিচালক, ঢাকা মেট্রো উত্তর ও দক্ষিণ) সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ও আব্দুল হামিদ
এই অভিযানে তাদের সাহসিকতা, দায়িত্ববোধ এবং রাতভর পরিশ্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
তারা শুধু আইন প্রয়োগ করেননি, প্রভাবশালীদের চাপের মুখেও জনস্বার্থে অটল অবস্থান নিয়েছেন। সিসার ভয়াবহতা: স্বাস্থ্য ও সমাজ দুটোই হুমকির মুখে নারকোটিক্সের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা জানান,
সিসায় দুই শতাংশের বেশি নিকোটিন থাকলে তা মাদক হিসেবে চিহ্নিত হয়। লাউঞ্জগুলোতে উচ্চমাত্রার নিকোটিনযুক্ত সিসা পরিবেশন করা হচ্ছে, যা তরুণদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি: ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, মানসিক অবসাদ, আসক্তি সামাজিক বিপর্যয়: তরুণদের নৈতিক অবক্ষয় পারিবারিক বন্ধন দুর্বলতা অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি মহাপরিচালকের ঘোষণা: “মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ছাড় নেই নারকোটিক্স মহাপরিচালক হাসান মারুফ দৃঢ়ভাবে বলেন, সিসা লাউঞ্জগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা মনে করে ক্ষমতার জোরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাবে, তাদের জন্য এ অভিযান ছিল সতর্কবার্তা।
উপসংহার: শুরু হলো বদলের সময় এই অভিযান প্রমাণ করে দিয়েছে, যদি প্রশাসন চায়, তাহলে মাদকের শেকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব।
নারকোটিক্সের সাহসী এই পদক্ষেপে রাজধানীর অনেক চিহ্নিত মাদকচক্র গা ঢাকা দিয়েছে, আস্তানা বন্ধ করে পালিয়েছে।
এই উদ্যোগ শুধু একটি সফল অভিযান নয়, এটি জনগণের প্রত্যাশার প্রতীক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন