“জুলাই ২৪ বিপ্লবে বিএনপির বড় ধরনের কোনো ভূমিকা নেই, জনগণ চায় দেশপ্রেমিক নতুন নেতৃত্ব”

- আপলোড সময় : ০৮:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ৩০০ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে উপনীত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনীতির ক্লান্তি এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জনগণের আস্থার সংকট এখন প্রকট। এমন এক পটভূমিতে ২০২৫ সালের “জুলাই ২৪ বিপ্লব”—যা একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক জাগরণের রূপ নিচ্ছে—তা নতুন এক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। তবে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: এত বড় একটি পরিবর্তনের অগ্রভাগে বিএনপি কোথায়? আর কেনই বা জনগণের একটা বড় অংশ এখন নতুন, দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের প্রত্যাশায় মুখিয়ে আছে?
বিএনপির অবস্থান ও সীমাবদ্ধতা:
বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল, যারা একসময় রাষ্ট্রক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। কিন্তু বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে দলটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক ব্যর্থতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নীতিগত বিভ্রান্তির কারণে জনগণের আস্থা হারিয়েছে।
জুলাই ২৪ বিপ্লবকে ঘিরে একটি নতুন ধারা গড়ে উঠলেও বিএনপিকে এই আন্দোলনের তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকায় দেখা যায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণগুলো হলো—
* দলীয় অভ্যন্তরীণ ভাঙন ও নেতৃত্ব সংকট
* মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মসূচির ঘাটতি
* তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা
* “ভবিষ্যতের রোডম্যাপ” স্পষ্টভাবে না তুলে ধরতে পারা
* অতীতের শাসনামলের নানা বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগ
জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও চাহিদা:
বর্তমান প্রজন্ম ও জনগণের এক বিশাল অংশের মধ্যে রাজনীতির প্রতি এক ধরনের হতাশা জন্ম নিয়েছে। তারা মনে করে, পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এজন্য তারা এখন এমন এক নেতৃত্বের সন্ধানে আছে—
* যারা দলীয় চিন্তা ছাড়িয়ে দেশকেই প্রথমে বিবেচনা করে
* যাদের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি ও নৈতিক দৃঢ়তা আছে
* যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল
* যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের মর্যাদা রক্ষা ও উন্নয়নের বার্তা দিতে সক্ষম
এই চাহিদা থেকেই “জুলাই ২৪ বিপ্লব” নতুন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা দেখিয়েছে। আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা ব্যক্তিরা হয়তো রাজনৈতিকভাবে নবাগত, কিন্তু তাদের বক্তব্য, সততা ও সাহস জনগণকে আকৃষ্ট করেছে।
নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা:
বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, কিছু উদীয়মান নাগরিক সমাজ নেতা, তরুণ শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী শ্রেণির মধ্যে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। যদিও এখনো তারা পুরোদমে সাংগঠনিক রূপ নিতে পারেনি, তবুও তাদের প্রতি জনগণের আস্থার গ্রাফ উর্ধ্বমুখী।
বিএনপি যদি এই পরিবর্তনের স্রোতে নিজেদের গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত না করতে পারে, তবে তারা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
উপসংহার:
“জুলাই ২৪ বিপ্লব” কোনো একক দলের নয়—এটি জনগণের জাগরণ। এটি একটি মাইলফলক, যা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে মানুষ এখন পরিবর্তন চায়—এবং সেই পরিবর্তন যেন হয় দেশপ্রেমিক, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের হাত ধরে। বিএনপি যদি এই সময়ে আত্মসমালোচনা করে, নীতি ও নেতৃত্বে আমূল সংস্কার না আনে, তবে তারা এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের বাইরে থেকে যাবে। আর দেশ এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাবে নতুন নেতৃত্বের আলোর মশাল হাতে।
তথ্যসূত্র (প্রস্তাবিত):
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
মাঠ পর্যায়ের জরিপ ও জনমত বিশ্লেষণ
“Democracy in Decline: Bangladesh and Beyond”, International Crisis Group Report
Transparency International Bangladesh (TIB) রিপোর্টসমূহ