ঢাকা ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্নাহ অনুসরণের গুরুত্ব এবং হাদীস অস্বীকারকারীদের জবাব

আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
  • আপলোড সময় : ১০:৩৬:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ২০১ বার পড়া হয়েছে

– মুমিনুল ইসলাম আযহারি
প্রথম অংশ: সুন্নাহ অনুসরণের গুরুত্ব:
১. *সুন্নাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহি:*
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وما ينطق عن الهوى * إن هو إلا وحي يوحى
অর্থাৎ নবী ﷺ নিজের মনগড়া কথা বলেন না; বরং যা বলেন, তা আল্লাহর ওহি।
সুতরাং সুন্নাহ অস্বীকার করা মানে ওহি অস্বীকার করা।

২. সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশদ বর্ণনা:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وأنزلنا إليك الذكر لتبين للناس
এখানে স্পষ্ট যে, কুরআন মৌলিক নির্দেশনা দেয়, আর সুন্নাহ সেগুলো ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত করে। যেমন—

কুরআনে নামাজের আদেশ আছে; কিন্তু কিভাবে নামাজ পড়তে হবে—তা শুধু সুন্নাহ থেকে জানা যায়।

জাকাতের ফরজিয়্যাত কুরআনে আছে; কিন্তু মাপ, পরিমাণ, শর্ত—সবই সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত।
এইসব ছাড়া কুরআনের অনেক বিধানই বুঝা যায় না।

৩. সুন্নাহ স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করে:
নবী ﷺ বলেন:
«ألا إني أوتيت الكتاب ومثله معه»
অর্থাৎ কুরআনের পাশাপাশি সুন্নাহও তাঁর উপর ওহি হিসেবে নাযিল হয়েছে।

৪. সুন্নাহ মেনে চলা ঈমানের শর্ত:
আল্লাহ বলেন:
فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم
অর্থাৎ ঈমান সম্পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না লোকেরা নবী ﷺ এর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়।
এই সিদ্ধান্ত তো সুন্নাহতেই।

৫. সুন্নাহ অনুসরণ করা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার উপায়:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله
অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ হল রাসূল ﷺ কে অনুসরণ করা।

*দ্বিতীয় অংশ: হাদীস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জবাব:*

১. সুন্নাহ অস্বীকারকারী কুরআনকেই অস্বীকার করছে:
কারণ কুরআনেই ৪০টিরও বেশি স্থানে নবী ﷺ এর আনুগত্যের আদেশ এসেছে:
وما آتاكم الرسول فخذوه
কুরআন গ্রহণ করে সুন্নাহ প্রত্যাখ্যান করা কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ।

২. সুন্নাহ ছাড়া ইসলামের মূল ইবাদতগুলোই অকার্যকর:
* নামাজ কিভাবে? রুকু-সিজদা কয়টা?
* যাকাতের নেসাব কত?
* হজের আরকান কি?
* দণ্ডবিধি, দেনা-পাওনা—কিভাবে নির্ধারিত হবে?
এসবের একটিও শুধু কুরআন থেকে জানা সম্ভব নয়। সবই সুন্নাহ থেকে এসেছে।

৩. হাদীস সংরক্ষণে মুসলিম উম্মাহর তুলনা নেই:
মুহাদ্দিসরা বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম—
* রাবীর চরিত্র যাচাই (জরহ ও তাদীল)
* isnād (সনদ) বিশ্লেষণ
* সহীহ–দ্বাঈফ পৃথকীকরণ
* শত শত বছরের কঠোর সংরক্ষণ ব্যবস্থা
এই ধরনের নিয়ম কেউ কখনো করেনি। এজন্য অন্য কোনো জাতি তাদের নবীর কথা এভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি।

৪. হাদীস অস্বীকার নতুন বিষয় নয়; পুরনো দাবির শক্তিশালী জবাব রয়েছে:
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন:
“যে হাদীস গ্রহণ করল, সে দলিল গ্রহণ করল; আর যে হাদীস অস্বীকার করল, সে কুরআন অস্বীকার করল।”

৫. “শুধু কুরআনই যথেষ্ট” এই দাবি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক:
কারণ কুরআনেই বলা হয়েছে—
وأنزل الله عليك الكتاب والحكمة
এখানে হিকমাহ বলতে সুন্নাহকেই বোঝানো হয়েছে।
অর্থাৎ কুরআন নিজে সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করেছে।

৬. সুন্নাহ অস্বীকার করলে পুরো শরিয়াহ ভেঙে পড়ে:
কারণ এতে—
* halal–haram মুছে যায়,
* শাস্তি–দণ্ড অকার্যকর হয়,
* ইবাদত ব্যাহত হয়,
* নতুন এক তৈরি ধর্মের জন্ম হয়, যা ইসলাম নয়।

قوله تعالى:
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
সূরা আন-নহল, আয়াত: ৪৪

*আয়াতের বাংলা অনুবাদ (সহীহ ও ধারাবাহিক অর্থ):*
“আর আমি তোমার প্রতি স্মরণিকা (কুরআন) নাজিল করেছি, যেন তুমি মানুষের কাছে তাদের নিকট নাজিলকৃত বিষয়সমূহ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দাও—আর যেন তারা চিন্তা-ভাবনা করে।”
(সূরা আন-নহল ১৬:৪৪)

শব্দার্থ ও মর্মবাণী:
الذِّكْر: কুরআন বা ওহি; এমন নির্দেশনা যা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং হিদায়াত দেয়।
لِتُبَيِّنَ: সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করা, খুলে বলা, বাস্তব প্রয়োগ দেখানো।
مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ: যে বিধান তাদের জন্য কুরআনে নাজিল করা হয়েছে।
يَتَفَكَّرُونَ: গভীরভাবে চিন্তা করা, হিকমত অনুধাবন করা।

আয়াতের সামগ্রিক ব্যাখ্যা (তাফসির)
১. *কুরআনের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে রাসূল ﷺ:*
আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন যে:
কুরআন নাজিলের পাশাপাশি
কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের দায়িত্বও রাসূল ﷺ–কে দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, শুধু কুরআন দিলেই মানুষের জন্য হিদায়াত পূর্ণ হতো না;
বরং কুরআনকে বাস্তবে কিভাবে বোঝা হবে, কিভাবে পালন করা হবে, কোন আয়াতের হিকমত কী—এসব ব্যাখ্যা প্রয়োজন ছিল।
এ দায়িত্বই পালন করেছেন রাসূল ﷺ।

২. সুন্নাহ কুরআনের বিবরণ, বিশদীকরণ ও বাস্তব রূপ:
এই আয়াত প্রমাণ করে—
সুন্নাহ ছাড়া কুরআনের অনেক বিধান অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
রাসূল ﷺ–এর বয়ান, ব্যাখ্যা, কর্ম, অনুমোদন—এসবই কুরআনের প্রয়োগতত্ত্ব (practical explanation)।

হাদিসের প্রয়োজনীয়তা সরাসরি কুরআন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

উদাহরণ:
*কুরআনের নির্দেশ ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ কে শিখিয়েছেন:*
* সালাত কায়েম করো সালাতের রাকাত সংখ্যা, সময়, পদ্ধতি রাসূল ﷺ
* যাকাত দাও কত নিসাব, কত শতাংশ, কার থেকে নেবে রাসূল ﷺ
* হজ করো তাওয়াফ, সাঈ, আরাফায় দাঁড়ানো রাসূল ﷺ
এ থেকেই স্পষ্ট—سُنَّة ছাড়া কুরআন পালন করা অসম্ভব।

৩. আয়াতটি হাদিস অস্বীকারকারীদের জন্য শক্তিশালী দলিল:
হাদিস বা সুন্নাহ অস্বীকারকারীরা বলে—
“কুরআনই যথেষ্ট।”

কিন্তু আল্লাহ নিজেই বলেছেন—
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাখ্যা না দিলে কুরআন যথেষ্ট হতো না।

এ আয়াত তাদের দাবিকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও কুরআন-বিরোধী করে দেয়।
কারণ:
“لِتُبَيِّنَ” (যেন তুমি ব্যাখ্যা করে দাও) — এটি নবীর সুন্নাহর ধর্মীয় কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ব্যাখ্যার দায়িত্ব কারো নয়—শুধু রাসূল ﷺ–এর।

৪. সুন্নাহ অনুসরণ করা মানে কুরআনের নির্দেশ অনুসরণ করা:
যখন আল্লাহ বলেন:
لِتُبَيِّنَ — নবী ব্যাখ্যা করবেন
তাহলে যে ব্যক্তি এই ব্যাখ্যা (অর্থাৎ সুন্নাহ) গ্রহণ করে—
সে প্রকৃত অর্থে কুরআন অনুসরণকারী।
এটি কুরআন ও সুন্নাহর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক প্রমাণ করে।

৫. আয়াতের সাহিত্যিক ও আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য:
“وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ”— কুরআনকে যে স্মরণিকা ও আলো বানানো হয়েছে, তা মহানতার পরিচায়ক।
“لِتُبَيِّنَ”— নবীর নেতৃত্ব, রাহনুমাই ও শিক্ষকসত্তার ঘোষণা।
“يَتَفَكَّرُونَ”— কুরআন অন্ধ অনুসরণের জন্য নয়, গভীর চিন্তা ও উপলব্ধির জন্য।

*সংক্ষেপে শিক্ষণীয় বিষয়:*
1. কুরআন ও সুন্নাহ একে অপরের পরিপূরক।
2. সুন্নাহ কুরআনের ব্যাখ্যা; নবী ছাড়া কুরআন বোঝা পূর্ণ নয়।
3. সুন্নাহ অস্বীকার করা কুরআনের নির্দেশ অস্বীকার করার শামিল।
4. এই আয়াত হাদিসের কর্তৃত্বকে সরাসরি প্রমাণ করে।
5. ইসলাম শুধু গ্রন্থধর্ম নয়—এটি ব্যবহারিক দীন, যা রাসূল ﷺ বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

সারসংক্ষেপ:
*সুন্নাহ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একে অস্বীকার করা মানে ওহি অস্বীকার করা, ইসলামকে বিকৃত করা এবং শরিয়াহকে অকার্যকর করা। ইসলাম কুরআন ও সুন্নাহ—দুটির সমন্বয়ে সম্পূর্ণ।*

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সুন্নাহ অনুসরণের গুরুত্ব এবং হাদীস অস্বীকারকারীদের জবাব

আপলোড সময় : ১০:৩৬:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

– মুমিনুল ইসলাম আযহারি
প্রথম অংশ: সুন্নাহ অনুসরণের গুরুত্ব:
১. *সুন্নাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহি:*
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وما ينطق عن الهوى * إن هو إلا وحي يوحى
অর্থাৎ নবী ﷺ নিজের মনগড়া কথা বলেন না; বরং যা বলেন, তা আল্লাহর ওহি।
সুতরাং সুন্নাহ অস্বীকার করা মানে ওহি অস্বীকার করা।

২. সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশদ বর্ণনা:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وأنزلنا إليك الذكر لتبين للناس
এখানে স্পষ্ট যে, কুরআন মৌলিক নির্দেশনা দেয়, আর সুন্নাহ সেগুলো ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত করে। যেমন—

কুরআনে নামাজের আদেশ আছে; কিন্তু কিভাবে নামাজ পড়তে হবে—তা শুধু সুন্নাহ থেকে জানা যায়।

জাকাতের ফরজিয়্যাত কুরআনে আছে; কিন্তু মাপ, পরিমাণ, শর্ত—সবই সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত।
এইসব ছাড়া কুরআনের অনেক বিধানই বুঝা যায় না।

৩. সুন্নাহ স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করে:
নবী ﷺ বলেন:
«ألا إني أوتيت الكتاب ومثله معه»
অর্থাৎ কুরআনের পাশাপাশি সুন্নাহও তাঁর উপর ওহি হিসেবে নাযিল হয়েছে।

৪. সুন্নাহ মেনে চলা ঈমানের শর্ত:
আল্লাহ বলেন:
فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم
অর্থাৎ ঈমান সম্পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না লোকেরা নবী ﷺ এর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়।
এই সিদ্ধান্ত তো সুন্নাহতেই।

৫. সুন্নাহ অনুসরণ করা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার উপায়:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله
অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ হল রাসূল ﷺ কে অনুসরণ করা।

*দ্বিতীয় অংশ: হাদীস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জবাব:*

১. সুন্নাহ অস্বীকারকারী কুরআনকেই অস্বীকার করছে:
কারণ কুরআনেই ৪০টিরও বেশি স্থানে নবী ﷺ এর আনুগত্যের আদেশ এসেছে:
وما آتاكم الرسول فخذوه
কুরআন গ্রহণ করে সুন্নাহ প্রত্যাখ্যান করা কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ।

২. সুন্নাহ ছাড়া ইসলামের মূল ইবাদতগুলোই অকার্যকর:
* নামাজ কিভাবে? রুকু-সিজদা কয়টা?
* যাকাতের নেসাব কত?
* হজের আরকান কি?
* দণ্ডবিধি, দেনা-পাওনা—কিভাবে নির্ধারিত হবে?
এসবের একটিও শুধু কুরআন থেকে জানা সম্ভব নয়। সবই সুন্নাহ থেকে এসেছে।

৩. হাদীস সংরক্ষণে মুসলিম উম্মাহর তুলনা নেই:
মুহাদ্দিসরা বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম—
* রাবীর চরিত্র যাচাই (জরহ ও তাদীল)
* isnād (সনদ) বিশ্লেষণ
* সহীহ–দ্বাঈফ পৃথকীকরণ
* শত শত বছরের কঠোর সংরক্ষণ ব্যবস্থা
এই ধরনের নিয়ম কেউ কখনো করেনি। এজন্য অন্য কোনো জাতি তাদের নবীর কথা এভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি।

৪. হাদীস অস্বীকার নতুন বিষয় নয়; পুরনো দাবির শক্তিশালী জবাব রয়েছে:
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন:
“যে হাদীস গ্রহণ করল, সে দলিল গ্রহণ করল; আর যে হাদীস অস্বীকার করল, সে কুরআন অস্বীকার করল।”

৫. “শুধু কুরআনই যথেষ্ট” এই দাবি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক:
কারণ কুরআনেই বলা হয়েছে—
وأنزل الله عليك الكتاب والحكمة
এখানে হিকমাহ বলতে সুন্নাহকেই বোঝানো হয়েছে।
অর্থাৎ কুরআন নিজে সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করেছে।

৬. সুন্নাহ অস্বীকার করলে পুরো শরিয়াহ ভেঙে পড়ে:
কারণ এতে—
* halal–haram মুছে যায়,
* শাস্তি–দণ্ড অকার্যকর হয়,
* ইবাদত ব্যাহত হয়,
* নতুন এক তৈরি ধর্মের জন্ম হয়, যা ইসলাম নয়।

قوله تعالى:
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
সূরা আন-নহল, আয়াত: ৪৪

*আয়াতের বাংলা অনুবাদ (সহীহ ও ধারাবাহিক অর্থ):*
“আর আমি তোমার প্রতি স্মরণিকা (কুরআন) নাজিল করেছি, যেন তুমি মানুষের কাছে তাদের নিকট নাজিলকৃত বিষয়সমূহ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দাও—আর যেন তারা চিন্তা-ভাবনা করে।”
(সূরা আন-নহল ১৬:৪৪)

শব্দার্থ ও মর্মবাণী:
الذِّكْر: কুরআন বা ওহি; এমন নির্দেশনা যা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং হিদায়াত দেয়।
لِتُبَيِّنَ: সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করা, খুলে বলা, বাস্তব প্রয়োগ দেখানো।
مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ: যে বিধান তাদের জন্য কুরআনে নাজিল করা হয়েছে।
يَتَفَكَّرُونَ: গভীরভাবে চিন্তা করা, হিকমত অনুধাবন করা।

আয়াতের সামগ্রিক ব্যাখ্যা (তাফসির)
১. *কুরআনের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে রাসূল ﷺ:*
আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন যে:
কুরআন নাজিলের পাশাপাশি
কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের দায়িত্বও রাসূল ﷺ–কে দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, শুধু কুরআন দিলেই মানুষের জন্য হিদায়াত পূর্ণ হতো না;
বরং কুরআনকে বাস্তবে কিভাবে বোঝা হবে, কিভাবে পালন করা হবে, কোন আয়াতের হিকমত কী—এসব ব্যাখ্যা প্রয়োজন ছিল।
এ দায়িত্বই পালন করেছেন রাসূল ﷺ।

২. সুন্নাহ কুরআনের বিবরণ, বিশদীকরণ ও বাস্তব রূপ:
এই আয়াত প্রমাণ করে—
সুন্নাহ ছাড়া কুরআনের অনেক বিধান অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
রাসূল ﷺ–এর বয়ান, ব্যাখ্যা, কর্ম, অনুমোদন—এসবই কুরআনের প্রয়োগতত্ত্ব (practical explanation)।

হাদিসের প্রয়োজনীয়তা সরাসরি কুরআন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

উদাহরণ:
*কুরআনের নির্দেশ ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ কে শিখিয়েছেন:*
* সালাত কায়েম করো সালাতের রাকাত সংখ্যা, সময়, পদ্ধতি রাসূল ﷺ
* যাকাত দাও কত নিসাব, কত শতাংশ, কার থেকে নেবে রাসূল ﷺ
* হজ করো তাওয়াফ, সাঈ, আরাফায় দাঁড়ানো রাসূল ﷺ
এ থেকেই স্পষ্ট—سُنَّة ছাড়া কুরআন পালন করা অসম্ভব।

৩. আয়াতটি হাদিস অস্বীকারকারীদের জন্য শক্তিশালী দলিল:
হাদিস বা সুন্নাহ অস্বীকারকারীরা বলে—
“কুরআনই যথেষ্ট।”

কিন্তু আল্লাহ নিজেই বলেছেন—
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাখ্যা না দিলে কুরআন যথেষ্ট হতো না।

এ আয়াত তাদের দাবিকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও কুরআন-বিরোধী করে দেয়।
কারণ:
“لِتُبَيِّنَ” (যেন তুমি ব্যাখ্যা করে দাও) — এটি নবীর সুন্নাহর ধর্মীয় কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ব্যাখ্যার দায়িত্ব কারো নয়—শুধু রাসূল ﷺ–এর।

৪. সুন্নাহ অনুসরণ করা মানে কুরআনের নির্দেশ অনুসরণ করা:
যখন আল্লাহ বলেন:
لِتُبَيِّنَ — নবী ব্যাখ্যা করবেন
তাহলে যে ব্যক্তি এই ব্যাখ্যা (অর্থাৎ সুন্নাহ) গ্রহণ করে—
সে প্রকৃত অর্থে কুরআন অনুসরণকারী।
এটি কুরআন ও সুন্নাহর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক প্রমাণ করে।

৫. আয়াতের সাহিত্যিক ও আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য:
“وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ”— কুরআনকে যে স্মরণিকা ও আলো বানানো হয়েছে, তা মহানতার পরিচায়ক।
“لِتُبَيِّنَ”— নবীর নেতৃত্ব, রাহনুমাই ও শিক্ষকসত্তার ঘোষণা।
“يَتَفَكَّرُونَ”— কুরআন অন্ধ অনুসরণের জন্য নয়, গভীর চিন্তা ও উপলব্ধির জন্য।

*সংক্ষেপে শিক্ষণীয় বিষয়:*
1. কুরআন ও সুন্নাহ একে অপরের পরিপূরক।
2. সুন্নাহ কুরআনের ব্যাখ্যা; নবী ছাড়া কুরআন বোঝা পূর্ণ নয়।
3. সুন্নাহ অস্বীকার করা কুরআনের নির্দেশ অস্বীকার করার শামিল।
4. এই আয়াত হাদিসের কর্তৃত্বকে সরাসরি প্রমাণ করে।
5. ইসলাম শুধু গ্রন্থধর্ম নয়—এটি ব্যবহারিক দীন, যা রাসূল ﷺ বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

সারসংক্ষেপ:
*সুন্নাহ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একে অস্বীকার করা মানে ওহি অস্বীকার করা, ইসলামকে বিকৃত করা এবং শরিয়াহকে অকার্যকর করা। ইসলাম কুরআন ও সুন্নাহ—দুটির সমন্বয়ে সম্পূর্ণ।*

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন