ঢাকা ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় ভোটারদের মারধরের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোড সময় : ০৪:২৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০২৩
  • / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় চার ভোটারকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই নির্বাচনে জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের অভিযোগ, বেলা ১১টার দিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাগেরচর মাদ্রাসা কেন্দ্রে জগ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় ভোটারদের মারধর করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং সাবেক পৌর মেয়র। তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। হাবিবুর বলেন, নিজের এলাকা হওয়ায় এখানে ৯৫ শতাংশ ভোট আমার। এ কারণে নৌকার লোকজন কেন্দ্রটিকে দখলে নিয়ে রেখেছে। বেলা ১১টার দিকে নাগেরচর মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম ও তার সমর্থকেরা চার ভোটারকে মারধর করেছে। পরে পৌরসভার যুবলীগ নেতা শামীম মিয়া তার সমর্থকদের নিয়ে নাগেরচর মাদ্রাসার পুরুষ ও নারী কেন্দ্র দুটি দখলে নিয়ে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেন। এ ছাড়া নৌকার প্রার্থী সুন্দর আলীর লোকজন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র দখলে নিয়েছিল। তারা বুথের ভেতর ঢুকে জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে। বহিরাগতরা কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে, মারধর করছে।
নাগেরচর কেন্দ্রটি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুর বাসভবনের ৫০০ গজের মধ্যে। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের ছেলেকে ফোন করে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকা ছাড়া কাউকে নামতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছিলেন।
মারধরের শিকার দুজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ওই এলাকার মো. কামাল উদ্দিন ও মো. রয়েল। কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোট দিয়া বের হবার পরেই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন আমার শার্টের কলার ধরে চড়থাপ্পড় দিতে থাকে। আমি নাকি নৌকায় ভোট না দিয়া অন্য মার্কায় ভোট দিছি, এমনটা কেন করছি, এই বইলা মারতে থাকে। তারা মারতে মারতে বলে, “নৌকায় কেন ভোট দেস নাই? শুধু আমারে না, আরও কয়েকজনকে তারা মারছে। সবাইরে নৌকায় ভোট দিতে তারা বাধ্য করতেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর আলীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকক্ষগুলোর সামনে ভোটারদের দীর্ঘ সারি। এ সময় ভোটাররা অভিযোগ করেন ধীরগতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁরা ভোট দিতে পারছেন না৷ পরে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় অন্ধকার কক্ষে অনেক ভোটারের উপস্থিতি। এ সময় একটি কক্ষের গোপন বুথে দুজনকে দেখা গেছে। তখন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন। পরে গোপন বুথে থাকা ওই দুই ব্যক্তি সেখান থেকে চলে যান। তাঁদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
নাগেরচর মাদ্রাসার পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, কিছু নির্বোধ এসে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করেছে। আমি পুলিশের সহায়তায় তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। দুবার ধমক দিয়েছি। তারা কথা শোনেনি। আমি তখন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
পরে এসপি গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সব কটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে টুকটাক কথা-কাটাকাটি হয়। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় ভোটারদের মারধরের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর

আপলোড সময় : ০৪:২৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০২৩

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় চার ভোটারকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই নির্বাচনে জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের অভিযোগ, বেলা ১১টার দিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাগেরচর মাদ্রাসা কেন্দ্রে জগ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় ভোটারদের মারধর করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং সাবেক পৌর মেয়র। তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। হাবিবুর বলেন, নিজের এলাকা হওয়ায় এখানে ৯৫ শতাংশ ভোট আমার। এ কারণে নৌকার লোকজন কেন্দ্রটিকে দখলে নিয়ে রেখেছে। বেলা ১১টার দিকে নাগেরচর মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম ও তার সমর্থকেরা চার ভোটারকে মারধর করেছে। পরে পৌরসভার যুবলীগ নেতা শামীম মিয়া তার সমর্থকদের নিয়ে নাগেরচর মাদ্রাসার পুরুষ ও নারী কেন্দ্র দুটি দখলে নিয়ে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেন। এ ছাড়া নৌকার প্রার্থী সুন্দর আলীর লোকজন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র দখলে নিয়েছিল। তারা বুথের ভেতর ঢুকে জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে। বহিরাগতরা কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে, মারধর করছে।
নাগেরচর কেন্দ্রটি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুর বাসভবনের ৫০০ গজের মধ্যে। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের ছেলেকে ফোন করে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকা ছাড়া কাউকে নামতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছিলেন।
মারধরের শিকার দুজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ওই এলাকার মো. কামাল উদ্দিন ও মো. রয়েল। কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোট দিয়া বের হবার পরেই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন আমার শার্টের কলার ধরে চড়থাপ্পড় দিতে থাকে। আমি নাকি নৌকায় ভোট না দিয়া অন্য মার্কায় ভোট দিছি, এমনটা কেন করছি, এই বইলা মারতে থাকে। তারা মারতে মারতে বলে, “নৌকায় কেন ভোট দেস নাই? শুধু আমারে না, আরও কয়েকজনকে তারা মারছে। সবাইরে নৌকায় ভোট দিতে তারা বাধ্য করতেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর আলীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকক্ষগুলোর সামনে ভোটারদের দীর্ঘ সারি। এ সময় ভোটাররা অভিযোগ করেন ধীরগতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁরা ভোট দিতে পারছেন না৷ পরে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় অন্ধকার কক্ষে অনেক ভোটারের উপস্থিতি। এ সময় একটি কক্ষের গোপন বুথে দুজনকে দেখা গেছে। তখন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন। পরে গোপন বুথে থাকা ওই দুই ব্যক্তি সেখান থেকে চলে যান। তাঁদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
নাগেরচর মাদ্রাসার পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, কিছু নির্বোধ এসে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করেছে। আমি পুলিশের সহায়তায় তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। দুবার ধমক দিয়েছি। তারা কথা শোনেনি। আমি তখন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
পরে এসপি গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সব কটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে টুকটাক কথা-কাটাকাটি হয়। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন