ঢাকা ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনারগাঁয়ের অন্যতম মাদক চক্রের সদস্যদের খোঁজে রাজশাহী পুলিশ

সোনারগাঁ প্রতিনিধি
সোনারগাঁ প্রতিনিধি
  • আপলোড সময় : ০৯:৩২:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৫৪৬ বার পড়া হয়েছে

গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবার পর এবার দেশের মাদক কারবারিরা এলএসডি ও আইছের মতো মরণঘাতী মাদকদ্রব্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজে। প্রতিনিয়ত পুলিশ প্রশাসন যতই এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তৎপর হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজের কিট নামে পরিচিত মাদক কারবারিরাও ততই অভিনব কৌশলে জনগণ তথা তরুণদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে নানান মাদকদ্রব্য। এতে যেমন ক্ষতি হচ্ছে পরিবার ও ব্যাক্তি জীবনের তেমন ক্ষতি হচ্ছে সমাজ ও নীতি নৈতিকতার। দেশের বিভিন্ন স্থানে দৈনন্দিন মাদকের চালান অথবা মাদক কারবারিরা ধরা পরছে, তবে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।

আড়ালে থাকা গড ফাদারদের এক অন্যতম চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের বারদী বাসস্টপ সংলগ্ন ওরোলাপুর গ্রামের মোঃ সাইদুল(৫৪) ও তার স্ত্রী আকসা বেগম(৪৫)। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে মাদক সম্রাট মোঃ সাইদুলের স্ত্রী আকসা বেগম, বোন রুনা, বোন জামাই মোস্তফা, ছেলে মোঃ রনি, মেয়ের জামাই আব্দুল্লাহ সহ পরিবারে প্রায় সকল সদস্যরাই মাদকের সাথে জড়িত।

মাদক সম্রার সাইদুল গোপন সাক্ষাৎকারে পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গত ১১’ই সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী আকসা বেগম ও বোন রুনা গাঁজার একটি বড় চালান রেল সংযোগে দিতে গিয়ে রাজশাহী জেলার পাকশী থানায় রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশের হাতে ধরাও পরে। তাৎক্ষণিক দুই মাদক সম্রাজ্ঞীর তল্লাশি নিয়ে প্রায় ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশ।
সাইদুল আরো বলেন, তার বড় মেয়ের স্বামী আব্দুল্লাহ ও সাইদুলের স্ত্রীর বড় বোন রাজশাহী থেকে যাবতীয় কর্যক্রম গোপনে দেখাশোনা করছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাইদুলের মেয়ের স্বামী আব্দুল্লাহ, ছেলে রনি ও রনির বন্ধু বারদী ইউনিয়নের আলগীরচর এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে সোহেল রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

অন্যদিকে রাজশাহীতে বসবাসরত সাইদুলের স্ত্রীর বড় বোনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অকথ্য অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবির সদস্যদের নামেও ভয় প্রদর্শন করে বলেন এসব র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবি আমি লালন পালন করি এবং মাদকের যত চালান দিয়ে থাকি তার বেশিরভাগই র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবির নিকট হতে সংগ্রহ করে থাকি। পারলে আমাকে কিছু করে দেখাইশ, এমন ১০ টা সাংবাদিক মিলেও আমাকে কিছু করার ক্ষমতা নাই। একপর্যায়ে মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় ঐ মাদক সম্রাজ্ঞী।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সাইদুল জীবনের শুরু থেকেই নেহাত দারিদ্রতার সাথে জীবন জাপন করে আসছে। তার ছেলে সন্তানরাও দৃষ্টিতে পরার মতো তেমন কিছুই করে না। তবে বর্তমান সময়ে সাইদুলের বসত বাড়ি পাকা দালানে রুপান্তর হয়েছে, বাড়িতে যুক্ত হয়েছে এয়ারকন্ডিশন। একইভাবে সাইদুলের মেয়ের স্বামী আব্দুল্লাহ অল্প কিছুদিনে মধ্যে নতুন জমিন ক্রয় করে ঐ স্থানে ডুপ্লেক্স বাড়ি৷ নির্মাণের কাজ করছে। অথচ আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে প্রায় খালি হাতে দেশে আসে, আসার সময় বিমানের টিকিটের টাকা বাংলাদেশ থেকে নিতে হয়েছে। কিন্তু গত তিন মাসের মধ্যে আচমকাই তাদের পরিবর্তন অনেকটা আঙুল ফুলে কলাগাছের মতোই। একদিকে সাইদুলেরও পূর্বের পেশা ফুটপাতে বসে মনোহারি পণ্য বিক্রির ব্যবসা পরিবর্তন হয়নি আর দেশে এসে বেকার জীবন কাটাচ্ছে মেয়ের জামাই আব্দুল্লাহ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে তাদের মাদক কারবারি সারা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এযাবতকাল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ করলেও এই প্রথম রাজশাহী জেলায় চক্রের দুই সদস্য পুলিশের জালে ধরা পরে। ধারনা করা হচ্ছে পুলিশি তদন্ত সাপেক্ষে চক্রের অন্যান্য সদস্যরাও অচিরেই ধরা পরবে। এদের মধ্যে মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে রয়েছে রনি, সোহেল ও আব্দুল্লাহ। এদের ওপেন চলাফেরা তরুন প্রজন্মের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।

রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশের এসআই রুবেল মিয়া বলেন, রুনা ও আকসা বেগমকে ২০ কেজি গাঁজা সমেত হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় সত্যতা পেয়ে চক্রের অন্যান সদস্যদের নাম বেড়িয়ে আসে যাদের অধিকাংশই ঢাকা নারায়ণগঞ্জে ও রাজশাহীতে অবস্থান করছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় তাদের গ্রেপ্তার অভিযান পরিচলনা করা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সোনারগাঁয়ের অন্যতম মাদক চক্রের সদস্যদের খোঁজে রাজশাহী পুলিশ

আপলোড সময় : ০৯:৩২:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবার পর এবার দেশের মাদক কারবারিরা এলএসডি ও আইছের মতো মরণঘাতী মাদকদ্রব্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজে। প্রতিনিয়ত পুলিশ প্রশাসন যতই এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তৎপর হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজের কিট নামে পরিচিত মাদক কারবারিরাও ততই অভিনব কৌশলে জনগণ তথা তরুণদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে নানান মাদকদ্রব্য। এতে যেমন ক্ষতি হচ্ছে পরিবার ও ব্যাক্তি জীবনের তেমন ক্ষতি হচ্ছে সমাজ ও নীতি নৈতিকতার। দেশের বিভিন্ন স্থানে দৈনন্দিন মাদকের চালান অথবা মাদক কারবারিরা ধরা পরছে, তবে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।

আড়ালে থাকা গড ফাদারদের এক অন্যতম চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের বারদী বাসস্টপ সংলগ্ন ওরোলাপুর গ্রামের মোঃ সাইদুল(৫৪) ও তার স্ত্রী আকসা বেগম(৪৫)। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে মাদক সম্রাট মোঃ সাইদুলের স্ত্রী আকসা বেগম, বোন রুনা, বোন জামাই মোস্তফা, ছেলে মোঃ রনি, মেয়ের জামাই আব্দুল্লাহ সহ পরিবারে প্রায় সকল সদস্যরাই মাদকের সাথে জড়িত।

মাদক সম্রার সাইদুল গোপন সাক্ষাৎকারে পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গত ১১’ই সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী আকসা বেগম ও বোন রুনা গাঁজার একটি বড় চালান রেল সংযোগে দিতে গিয়ে রাজশাহী জেলার পাকশী থানায় রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশের হাতে ধরাও পরে। তাৎক্ষণিক দুই মাদক সম্রাজ্ঞীর তল্লাশি নিয়ে প্রায় ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশ।
সাইদুল আরো বলেন, তার বড় মেয়ের স্বামী আব্দুল্লাহ ও সাইদুলের স্ত্রীর বড় বোন রাজশাহী থেকে যাবতীয় কর্যক্রম গোপনে দেখাশোনা করছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাইদুলের মেয়ের স্বামী আব্দুল্লাহ, ছেলে রনি ও রনির বন্ধু বারদী ইউনিয়নের আলগীরচর এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে সোহেল রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

অন্যদিকে রাজশাহীতে বসবাসরত সাইদুলের স্ত্রীর বড় বোনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অকথ্য অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবির সদস্যদের নামেও ভয় প্রদর্শন করে বলেন এসব র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবি আমি লালন পালন করি এবং মাদকের যত চালান দিয়ে থাকি তার বেশিরভাগই র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবির নিকট হতে সংগ্রহ করে থাকি। পারলে আমাকে কিছু করে দেখাইশ, এমন ১০ টা সাংবাদিক মিলেও আমাকে কিছু করার ক্ষমতা নাই। একপর্যায়ে মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় ঐ মাদক সম্রাজ্ঞী।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সাইদুল জীবনের শুরু থেকেই নেহাত দারিদ্রতার সাথে জীবন জাপন করে আসছে। তার ছেলে সন্তানরাও দৃষ্টিতে পরার মতো তেমন কিছুই করে না। তবে বর্তমান সময়ে সাইদুলের বসত বাড়ি পাকা দালানে রুপান্তর হয়েছে, বাড়িতে যুক্ত হয়েছে এয়ারকন্ডিশন। একইভাবে সাইদুলের মেয়ের স্বামী আব্দুল্লাহ অল্প কিছুদিনে মধ্যে নতুন জমিন ক্রয় করে ঐ স্থানে ডুপ্লেক্স বাড়ি৷ নির্মাণের কাজ করছে। অথচ আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে প্রায় খালি হাতে দেশে আসে, আসার সময় বিমানের টিকিটের টাকা বাংলাদেশ থেকে নিতে হয়েছে। কিন্তু গত তিন মাসের মধ্যে আচমকাই তাদের পরিবর্তন অনেকটা আঙুল ফুলে কলাগাছের মতোই। একদিকে সাইদুলেরও পূর্বের পেশা ফুটপাতে বসে মনোহারি পণ্য বিক্রির ব্যবসা পরিবর্তন হয়নি আর দেশে এসে বেকার জীবন কাটাচ্ছে মেয়ের জামাই আব্দুল্লাহ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে তাদের মাদক কারবারি সারা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এযাবতকাল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ করলেও এই প্রথম রাজশাহী জেলায় চক্রের দুই সদস্য পুলিশের জালে ধরা পরে। ধারনা করা হচ্ছে পুলিশি তদন্ত সাপেক্ষে চক্রের অন্যান্য সদস্যরাও অচিরেই ধরা পরবে। এদের মধ্যে মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে রয়েছে রনি, সোহেল ও আব্দুল্লাহ। এদের ওপেন চলাফেরা তরুন প্রজন্মের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।

রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশের এসআই রুবেল মিয়া বলেন, রুনা ও আকসা বেগমকে ২০ কেজি গাঁজা সমেত হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় সত্যতা পেয়ে চক্রের অন্যান সদস্যদের নাম বেড়িয়ে আসে যাদের অধিকাংশই ঢাকা নারায়ণগঞ্জে ও রাজশাহীতে অবস্থান করছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় তাদের গ্রেপ্তার অভিযান পরিচলনা করা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন