৩ দিন পর উদ্ধার ৮ পুলিশের মৃতদেহ, জানাজায় আবেগঘন পরিবেশ
- আপলোড সময় : ১২:১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আর সেদিন দুপুরের পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা হয়। এ হামলায় কতজন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর থানা থেকে ৮ জন পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার রাতে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এসব পুলিশ সদস্যের জানাজা হয়। পুলিশের আইজিসহ ঊর্ধ্বতনরা এতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মহাপরিদর্শককে (আইজি) কাছে পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের ক্ষোভের কথা জানান। তুলে ধরেন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের দ্রুত বদলি চান।
পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, রাজারবাগে এই মুহূর্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে উদ্ধার হওয়া হাজার খানেক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছেন। তাদের থাকা খাওয়ার কষ্ট হচ্ছে। এরই মাঝে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এক পুলিশ সদস্য জানান, জানাজার সময় পুলিশ সদস্যদের মাঝে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কারণ, নিহতদের মধ্যে আছেন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসানও। নিহত অনেকের পরিচয় শনাক্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না লাশ গলে যাওয়ায়। শুধু তাই নয়, যাত্রাবাড়ী থানায় এখন পর্যন্ত কতজন নিহত হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে। এখন পর্যন্ত কতটি লাশ উদ্ধার হয়েছে তারও হিসাব দিতে পারছে না তারা।
যাত্রাবাড়ী থানার দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর উপস্থিত জনতা সেই এলাকার একটি ওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে— এমন কথা বলে পুলিশ সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
জানা গেছে, এখনও অনেক থানায় লাশ পড়ে আছে কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা যায়নি। আবার অনেকগুলোর দেহ পচন ধরায় সেগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পুলিশ সদস্যদের ধারণা, সারাদেশে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের আইজিপিকে তারা প্রশ্ন করেন।
যাত্রাবাড়ী থানা থেকে উদ্ধার আট পুলিশ সদস্যের জানাজা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। পরে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আইজিপি।
জানাজার সময় পুলিশ সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বাহাত্তর ঘণ্টা লাশগুলো যাত্রাবাড়ী থানায় পড়েছিল। এর ফলে অনেকগুলোতে পচন ধরে।
জানাজায় অংশগ্রহণকারী এক পুলিশ সদস্য জানান, জানাজার পর ঘিরে রাজারবাগে থাকা পুলিশ সদস্যরা ঘিরে ধরেন আইজিপিকে। এসময় তারা গত কয়েকদিনে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের আচরণ এবং তাদের কারণে পুলিশ সদস্যদের করুণ পরিণতির কথা আইজিপির কাছে তুলে ধরেন।
সার্জেন্ট পদমর্যাদার এক নারী সদস্য আইজিপিকে জানান, চট্টগ্রামে রেলওয়ে পুলিশের রেজাউল নামে এক সদস্যের ওপর বুধবারও হামলা হয়েছে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার কথা শুনে অন্য পুলিশ সদস্যরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
সেই নারী পুলিশ সদস্য আইজিপিকে উদ্দেশ্য বলেন, স্যার, আমরা যারা ডিএমপিসহ যেখানেই কাজ করি ঊর্ধ্বতনদের মুখ দেখতে লজ্জা লাগছে। আমরা তাদেরকে আর চাই না। তাদের দ্রুত বদলি চাই।
আইজিপি এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের অভয় দেন। তিনি আশ্বস্ত করেন, যারা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইজিপি আরও বলেন, আমরা তো কাজ শুরু করেছি, এখনও শেষ হয়নি। তার কথার মাঝেই পুলিশ সদস্যরা বলতে থাকেন, আমরা কর্মস্থলে ফিরতে চাই কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করেন।