সরকার পতনে পলাতক থাকলেও ফের এলাকায় এসে প্রভাব বিস্তার শুরু সন্ত্রাসী মতির
- আপলোড সময় : ০৯:৪২:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ৪৩২ বার পড়া হয়েছে
সারাদেশে এক দফার দাবিতে ছাত্র-জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একে এম শামীম ওসমান ও তার পরিবার দেশত্যাগ করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে শামীম ওসমানের দেশত্যাগের সাথে সাথে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিতর্কিত কথিত যুবলীগ নেতা সন্ত্রাসী মতিউর রহমান মতিও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
মতিউর রহমান মতি নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা রাজাকারের ছেলে। দূর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলাও রয়েছে।
পরবর্তীতে সরকারবিহীন সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা; শহর থেকে গ্রামজুড়ে হামলা, ভাঙচুরের অসংখ্য ঘটনা ঘটে।
ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হতে না হতেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একে এম শামীম ওসমানের বাড়ি ভাঙচুর করে দুষ্কৃতিকারীরা। এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সকল কার্যক্রম এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসা কথিত যুবলীগ নেতা রাজাকার পুত্র মতিউর রহমান মতির অফিস ও বাড়িতে হামলা করেন দুষ্কৃতিকারীরা। হামলার আগেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান যুবলীগ নেতা মতি ও তার ক্যাশিয়ার মানিক মাস্টার, মতির সেকেন্ড ইন কমান্ড তেল চুরির শেল্টার দাতা আশরাফ উদ্দিন, নাতনি জামাই সন্ত্রাসী পানি আক্তার ও মামুন ওরফে ভাগিনা মামুন।
বিগত ১৫-১৬ বছরে টানা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য একে এম শামীম ওসমানের ছত্রছায়ায় রাজাকার পুত্র সন্ত্রাসী মতিউর রহমান মতি হয়ে উঠেন বেপরোয়া। তার সাথে বেপরোয়া হয়ে উঠেন আরও চার খলিফা। যারা ইতোমধ্যে দূর্নীতি, লুটপাট, জমি দখলসহ অসংখ্য অপরাধ কর্মকান্ড করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
ছাত্র-জনতার রাজধানীর রাজপথ দখলের পর ৫ অগাস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে সেদিনই নানা ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। এদিকে ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ না শুকাতেই ফের এলকায় এসে প্রভাব বিস্তার শুরু করেছেন কথিত যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি। তার সঙ্গে এলকায় ফিরেছেন তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আশরাফ উদ্দিন। তাদের উপস্থিতিতে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের উপর হামলার জন্য সামনে থেকে নির্দেশনা দেন এই রাজাকার পুত্র সন্ত্রাসী মতি। শামীম ওসমানের নির্দেশে ছাত্রদের উপর হামলাও করেছেন এই সন্ত্রাসী ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এতে সিদ্ধিরগঞ্জসহ সারাদেশে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তারা আরও জানান, আমাদের সন্তানদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা এলাকায় আসতে শুরু করেছে। তারা এলাকায় এসে পূনরায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যেকোনো সময় এলাকাবাসীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, তারা দীর্ঘদিন লুটপাট করে দূর্নীতি করে শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে এ লুটপাট চালিয়ে গেছেন তারা (মতিউর রহমান মতি বাহিনী)। তাদেরকে আর ছাড় দিবে না ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাসী। তাদেরকে এবার শক্তহাতে প্রতিহত করবেন এলাকাবাসী।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আপনারা জানেন আন্দোলনের চাপে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাবার পর দেশের অধিকাংশ থানায় হামলা, ভাংচুর, অস্ত্র লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলেছে। যারা দূর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সে যে দলেরই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তালিকা তৈরি করেছেন। অন্যায় করে আর কেউ ক্ষমা পাবে না বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দায়ে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক কথিত যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি ছিলেন যুবলীগের এই নেতা। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গত বছরের ৬ নভেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে শুনানি শেষে সন্ত্রাসী মতিকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।