ঢাকা ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিদ্ধিরগঞ্জে মিতালি মার্কেটে বেপোরোয় জয়নাল, নিশ্চুপ পুলিশ : আতংকে ব্যবসায়ী মহল

মুহাম্মদ আলী (নিজস্ব প্রতিবেদক)
মুহাম্মদ আলী (নিজস্ব প্রতিবেদক)
  • আপলোড সময় : ০২:৫৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৯৯ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তন দেখা গেলেও পরিবর্তন হয়নি সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালি মার্কেটের চিহ্নিত চাঁদাবাজ জয়নাল ও তার সহযোগী মাঈনুদ্দিন, ইমন ও আলামিন চক্রের।
চাঁদার দাবিতে দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠছে জয়নাল ও তার বাহিনী। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে মারধর, নগদ টাকা ও মালামাল লুট যেনো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী মহল সার্বক্ষনিক জয়নাল ও তার বাহিনীর আতংকে দিনাদিপাত করছে। এমনকি এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেনা।
নাম না প্রকাশের শর্তে অনেকেই বলছেন এখন পুলিশে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা, পুলিশও আসছেনা। আবার অনেকে বলছেন গণঅভ্যুত্থানে আগে একাধিকবার পুলিশ আসলেও দেখেশুনে চলে গেছে। কাউকে তো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখেনি। এরপর আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে ফিরে আসতে দেখেছি তাকে। এই জয়নালের লাগাম কেউ টানতে পারবেনা। সে উপরের মহলে নাকি ম্যানেজ করে অবাধ বিচরণ করে ।
এদিকে গত কিছুদিন আগে একটি দোকানে চাঁদা চেয়ে না দেয়ায় দোকানে থাকা ফজলে এলাহি নামে ১০ বছরের এক শিশুকে মার্কেটের তিন তলা থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়। শিশুটি ভবনের নিচে বালুর স্তুপের উপর পড়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও তার হাত ও পা ভেঙে গেছে।
এছাড়াও ব্যবসায়ী রনি ও নজরুল ইসলাম মোল্লাসহ আরও কয়েক জনকে মারধর করে ও তাদের দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে চাঁদাবাজরা। আহত শিশু ফজলে এলাহি মিতালি মার্কেটের ১ নম্বর ভবনের ৫৫ নম্বর এলাহি হোসিয়ারী দোকান মালিক নজরুল ইসলামের ছেলে। অন্যরা হলেন, ২ নম্বর ভবনের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মোল্লা (৩৮) ও ৩ নম্বর ভবনের ফ্লিম ফ্যাশনের মালিক রনি (৩০)।
আহত শিশু ফজলে এলাহি মিতালি মার্কেটের ১ নম্বর ভবনের ৫৫ নম্বর এলাহি হোসিয়ারী দোকান মালিক নজরুল ইসলামের ছেলে। অন্যরা হলেন, ২ নম্বর ভবনের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মোল্লা (৩৮) ও ৩ নম্বর ভবনের ফ্লিম ফ্যাশনের মালিক রনি (৩০)।
শিশু ফজলে এলাহি জানায়, এক মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার চাঁদা নিতে দোকানে আসে মাঈনুদ্দিন, মানিক ও আলামিন। এসময় তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিলো। তারা দোকানে এসে চাঁদা চায়। চাঁদা দিতে না চাইলে দোকানের ক্যাশ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লুট করে নেয়। পরে তাকে ধরে নিয়ে যায় মার্কেটের তিন তলায়। সেখানে নিয়ে মারধর করে লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
ব্যবসায়ী রনি বলেন, সন্ত্রাস দমনের নামে জয়নালের সহযোগী লিটন মোল্লা, মাইনুদ্দিন ও মহিউদ্দিনসহ ১০-১২ জন মার্কেটে লুটপাট করছে। আমার গোডাউনের তালা ভেঙ্গে প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকার মালাল লুট করেছে। চাঁদা না দিলে জয়নাল ব্যবসায়ীদেরকে তার লোকজন দিয়ে ধরে অফিসে নিয়ে মারধর করে। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জয়নালের লোকজন আমাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা ৩৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। আমাকে মার্কেটের আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।
মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে মিতালি মার্কেটের প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে দৈনিক ২০০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে জয়নাল। মার্কেটের নিচে একটি অফিস করে ১০/১৫ জনের বাহিনী গড়ে তুলে সাড়ে ৪ হাজার দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে আসছেন তিনি। গত ৫ অগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যবসায়ীরা চাঁদা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে গত কয়েকদিন ধরে আবার চাঁদা নিতে আসছে জয়নালের লোকজন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই মারধর করে দোকানের মালা মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। তারা দলবল নিয়ে হঠাৎ করে এসে তাণ্ডব চালিয়ে দ্রুত চলে যায়। ভুক্তভোগীদের দাবি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেও কোন আইনী সহযোগিতা পাচ্ছি না।
্মার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন মিয়া ক্ষমতায় থাকা কালীন জয়নালের নেতৃত্বে মিতালী মার্কেটে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠে। এই সন্ত্রাসী বাহিনী মার্কেটে চাঁদাবাজি, মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ সকল অপকর্মের সাথে লিপ্ত ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন তারা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে মার্কেটে মায়ের দল লুটপাত সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। জয়নাল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যা করেছে বিএনপির লেবাস লাগে মার্কেটে তার চাইতে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনা।
এবিষয়ে কথা বলতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি তবে চাঁদা না পেয়ে ১০ বছরের শিশু ফজলে এলাহিকে মারধর করে লাথি মেরে তিন তলা থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, বুজেনই তো ভাই। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সিদ্ধিরগঞ্জে মিতালি মার্কেটে বেপোরোয় জয়নাল, নিশ্চুপ পুলিশ : আতংকে ব্যবসায়ী মহল

আপলোড সময় : ০২:৫৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তন দেখা গেলেও পরিবর্তন হয়নি সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালি মার্কেটের চিহ্নিত চাঁদাবাজ জয়নাল ও তার সহযোগী মাঈনুদ্দিন, ইমন ও আলামিন চক্রের।
চাঁদার দাবিতে দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠছে জয়নাল ও তার বাহিনী। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে মারধর, নগদ টাকা ও মালামাল লুট যেনো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী মহল সার্বক্ষনিক জয়নাল ও তার বাহিনীর আতংকে দিনাদিপাত করছে। এমনকি এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেনা।
নাম না প্রকাশের শর্তে অনেকেই বলছেন এখন পুলিশে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা, পুলিশও আসছেনা। আবার অনেকে বলছেন গণঅভ্যুত্থানে আগে একাধিকবার পুলিশ আসলেও দেখেশুনে চলে গেছে। কাউকে তো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখেনি। এরপর আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে ফিরে আসতে দেখেছি তাকে। এই জয়নালের লাগাম কেউ টানতে পারবেনা। সে উপরের মহলে নাকি ম্যানেজ করে অবাধ বিচরণ করে ।
এদিকে গত কিছুদিন আগে একটি দোকানে চাঁদা চেয়ে না দেয়ায় দোকানে থাকা ফজলে এলাহি নামে ১০ বছরের এক শিশুকে মার্কেটের তিন তলা থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়। শিশুটি ভবনের নিচে বালুর স্তুপের উপর পড়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও তার হাত ও পা ভেঙে গেছে।
এছাড়াও ব্যবসায়ী রনি ও নজরুল ইসলাম মোল্লাসহ আরও কয়েক জনকে মারধর করে ও তাদের দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে চাঁদাবাজরা। আহত শিশু ফজলে এলাহি মিতালি মার্কেটের ১ নম্বর ভবনের ৫৫ নম্বর এলাহি হোসিয়ারী দোকান মালিক নজরুল ইসলামের ছেলে। অন্যরা হলেন, ২ নম্বর ভবনের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মোল্লা (৩৮) ও ৩ নম্বর ভবনের ফ্লিম ফ্যাশনের মালিক রনি (৩০)।
আহত শিশু ফজলে এলাহি মিতালি মার্কেটের ১ নম্বর ভবনের ৫৫ নম্বর এলাহি হোসিয়ারী দোকান মালিক নজরুল ইসলামের ছেলে। অন্যরা হলেন, ২ নম্বর ভবনের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মোল্লা (৩৮) ও ৩ নম্বর ভবনের ফ্লিম ফ্যাশনের মালিক রনি (৩০)।
শিশু ফজলে এলাহি জানায়, এক মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার চাঁদা নিতে দোকানে আসে মাঈনুদ্দিন, মানিক ও আলামিন। এসময় তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিলো। তারা দোকানে এসে চাঁদা চায়। চাঁদা দিতে না চাইলে দোকানের ক্যাশ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লুট করে নেয়। পরে তাকে ধরে নিয়ে যায় মার্কেটের তিন তলায়। সেখানে নিয়ে মারধর করে লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
ব্যবসায়ী রনি বলেন, সন্ত্রাস দমনের নামে জয়নালের সহযোগী লিটন মোল্লা, মাইনুদ্দিন ও মহিউদ্দিনসহ ১০-১২ জন মার্কেটে লুটপাট করছে। আমার গোডাউনের তালা ভেঙ্গে প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকার মালাল লুট করেছে। চাঁদা না দিলে জয়নাল ব্যবসায়ীদেরকে তার লোকজন দিয়ে ধরে অফিসে নিয়ে মারধর করে। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জয়নালের লোকজন আমাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা ৩৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। আমাকে মার্কেটের আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।
মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে মিতালি মার্কেটের প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে দৈনিক ২০০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে জয়নাল। মার্কেটের নিচে একটি অফিস করে ১০/১৫ জনের বাহিনী গড়ে তুলে সাড়ে ৪ হাজার দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে আসছেন তিনি। গত ৫ অগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যবসায়ীরা চাঁদা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে গত কয়েকদিন ধরে আবার চাঁদা নিতে আসছে জয়নালের লোকজন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই মারধর করে দোকানের মালা মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। তারা দলবল নিয়ে হঠাৎ করে এসে তাণ্ডব চালিয়ে দ্রুত চলে যায়। ভুক্তভোগীদের দাবি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেও কোন আইনী সহযোগিতা পাচ্ছি না।
্মার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন মিয়া ক্ষমতায় থাকা কালীন জয়নালের নেতৃত্বে মিতালী মার্কেটে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠে। এই সন্ত্রাসী বাহিনী মার্কেটে চাঁদাবাজি, মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ সকল অপকর্মের সাথে লিপ্ত ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন তারা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে মার্কেটে মায়ের দল লুটপাত সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। জয়নাল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যা করেছে বিএনপির লেবাস লাগে মার্কেটে তার চাইতে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনা।
এবিষয়ে কথা বলতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি তবে চাঁদা না পেয়ে ১০ বছরের শিশু ফজলে এলাহিকে মারধর করে লাথি মেরে তিন তলা থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, বুজেনই তো ভাই। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন