ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ শীঘ্রই চালু হতে পারে

মোঃ সালে আহমেদ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
মোঃ সালে আহমেদ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
  • আপলোড সময় : ০৮:৩৭:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৩৯৮০ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ আবার চালু হতে যাচ্ছে। তিতাসের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র এর সত্যতা জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়একইসঙ্গে চুলা বা বার্নার বর্ধিতকরণের বিষয়টি অনুমোদন পেতে পারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা হয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে এমন প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে বৈধভাবে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে রেখেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত গুটিকয়েক এলপিজি (বোতলজাত গ্যাসের সিলিন্ডার) ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্তকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, কার্যত আবাসিক গ্যাস সংযোগ বৈধ উপায়ে বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ গ্রাহক অবৈধ উপায়ে নিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পুরনো গ্রাহকেরই বার্নার সংখ্যা বেড়েছে। এতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।জানা গেছে, সম্প্রতি তিতাস গ্যাস কার্যালয়ে সবশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দিনের পর দিন আবাসিক খাতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অভিযান চালিয়ে সবাই প্রায় ক্লান্ত। কারণ, আবাসিক খাতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিহ্নিত করা তিতাসের জন্য কঠিন কাজ। তবে গ্রাহকরা অবৈধভাবে ব্যবহার করতে চায় না। বৈধ সংযোগ বন্ধ থাকায় অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, মোট গ্যাসের শতকরা ১২ শতাংশ ব্যবহার করা হয় আবাসিক খাতে। বাকিটা শিল্প ও অন্যান্য খাতে। অথচ প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আবাসিক খাতে অবৈধ ব্যবহার বন্ধের অভিযানে। অন্যদিকে শিল্পে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ থাকলেও সেদিকে নজর কম দেওয়া হচ্ছে। মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বা বার্নার বর্ধিতকরণের অনুমোদন দিলে বিদ্যমান ব্যবহারের মধ্যেই শতকোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। নতুন গ্যাস বরাদ্দের দরকার হবে না। গ্রাহকরা কেবল কাগজ কলমে বৈধতা পাবে।

তিতাসের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সচিবরা গ্যাসের লোকসান কমাতে বারবার চেষ্টা করেছেন আবাসিক সংযোগ চালু এবং বার্নার বর্ধিতের অনুমোদন দিতে। কিন্তু গুটিকয়েক এলপিজি ব্যবসায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে আবাসিক খাতে সংযোগসহ, চুলা বর্ধিতকরণ বন্ধ রাখে। কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের টিম সারাদেশে অভিযান চালিয়ে দেখেছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাহিনীর ব্যারাক, সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় আবাসিক গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানির অসাধু লোকজন মিলে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। এখন অভিযান চালিয়েও কমানো যাচ্ছে না।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, কোনো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে একদিনে যে পরিমাণ অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার হয়, তাতে দুই-চার লাখ আবাসিক গ্রাহকের কয়েক মাসের ব্যবহারের সমান। ফলে আমাদের উচিত শিল্পেও অভিযান জোরদার করা। সরাসরি আবাসিক গ্যাস সংযোগ না দিলেও অন্তত বার্নার বর্ধিতকরণের বিষয়টি অনুমোদন পাওয়া উচিত।

আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য ৫৬ হাজার গ্রাহক ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে গ্যাস সংযোগ পাননি। তাদের সংযোগও দেওয়া হয়নি আবার টাকাও ফেরত দেয়নি। একপর্যায়ে তিতাস সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ চাইলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে অধিকাংশ গ্রাহক টাকা ফেরত নেয়নি।

প্রসঙ্গত, দেশে গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে আবারও সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের পর আবার জ্বালানি বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকের নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করা হয়। পরে ২০১৯ সালে লিখিতভাবে আবাসিক সংযোগ স্থগিত রাখার আদেশ জারি করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গত আট বছরে তিতাসসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের টাকা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ শীঘ্রই চালু হতে পারে

আপলোড সময় : ০৮:৩৭:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ আবার চালু হতে যাচ্ছে। তিতাসের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র এর সত্যতা জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়একইসঙ্গে চুলা বা বার্নার বর্ধিতকরণের বিষয়টি অনুমোদন পেতে পারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে পেট্রোবাংলা হয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে এমন প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে বৈধভাবে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে রেখেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত গুটিকয়েক এলপিজি (বোতলজাত গ্যাসের সিলিন্ডার) ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্তকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, কার্যত আবাসিক গ্যাস সংযোগ বৈধ উপায়ে বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ গ্রাহক অবৈধ উপায়ে নিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পুরনো গ্রাহকেরই বার্নার সংখ্যা বেড়েছে। এতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।জানা গেছে, সম্প্রতি তিতাস গ্যাস কার্যালয়ে সবশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দিনের পর দিন আবাসিক খাতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অভিযান চালিয়ে সবাই প্রায় ক্লান্ত। কারণ, আবাসিক খাতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিহ্নিত করা তিতাসের জন্য কঠিন কাজ। তবে গ্রাহকরা অবৈধভাবে ব্যবহার করতে চায় না। বৈধ সংযোগ বন্ধ থাকায় অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, মোট গ্যাসের শতকরা ১২ শতাংশ ব্যবহার করা হয় আবাসিক খাতে। বাকিটা শিল্প ও অন্যান্য খাতে। অথচ প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আবাসিক খাতে অবৈধ ব্যবহার বন্ধের অভিযানে। অন্যদিকে শিল্পে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ থাকলেও সেদিকে নজর কম দেওয়া হচ্ছে। মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বা বার্নার বর্ধিতকরণের অনুমোদন দিলে বিদ্যমান ব্যবহারের মধ্যেই শতকোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। নতুন গ্যাস বরাদ্দের দরকার হবে না। গ্রাহকরা কেবল কাগজ কলমে বৈধতা পাবে।

তিতাসের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সচিবরা গ্যাসের লোকসান কমাতে বারবার চেষ্টা করেছেন আবাসিক সংযোগ চালু এবং বার্নার বর্ধিতের অনুমোদন দিতে। কিন্তু গুটিকয়েক এলপিজি ব্যবসায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে আবাসিক খাতে সংযোগসহ, চুলা বর্ধিতকরণ বন্ধ রাখে। কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের টিম সারাদেশে অভিযান চালিয়ে দেখেছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাহিনীর ব্যারাক, সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় আবাসিক গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানির অসাধু লোকজন মিলে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। এখন অভিযান চালিয়েও কমানো যাচ্ছে না।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, কোনো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে একদিনে যে পরিমাণ অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার হয়, তাতে দুই-চার লাখ আবাসিক গ্রাহকের কয়েক মাসের ব্যবহারের সমান। ফলে আমাদের উচিত শিল্পেও অভিযান জোরদার করা। সরাসরি আবাসিক গ্যাস সংযোগ না দিলেও অন্তত বার্নার বর্ধিতকরণের বিষয়টি অনুমোদন পাওয়া উচিত।

আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য ৫৬ হাজার গ্রাহক ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে গ্যাস সংযোগ পাননি। তাদের সংযোগও দেওয়া হয়নি আবার টাকাও ফেরত দেয়নি। একপর্যায়ে তিতাস সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ চাইলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে অধিকাংশ গ্রাহক টাকা ফেরত নেয়নি।

প্রসঙ্গত, দেশে গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে আবারও সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের পর আবার জ্বালানি বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকের নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করা হয়। পরে ২০১৯ সালে লিখিতভাবে আবাসিক সংযোগ স্থগিত রাখার আদেশ জারি করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গত আট বছরে তিতাসসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের টাকা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন