চাদপুরের হাইমচরে মামলার ভয় দেখিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবি
- আপলোড সময় : ০৭:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
- / ৪৩৯ বার পড়া হয়েছে
চাঁদপুরের হাইমচরে মামলায় ভয় দেখিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া মোঃ শরিফ মিজি ওরফে কুট্রি নামক এক যুবকের বিরুদ্ধে।
হাইমচরে একটি মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরীহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের এর ভয়ভীতি দেখিয়ে শরিফ মিজি নামক জনৈক সমন্বয়ক পরিচয়ে এই চাঁদা দাবি করেন।
অভিযুক্ত যুবক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত গঠিত কমিটির সমন্বয়ক ও হাইমচর উত্তর আলগীর ৬ নং ওয়ার্ডের কানকাটা মোঃ হানিফা মিজির ছেলে।জানা গেছে একসময় সে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও এলাকায় চুরি চিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিল। ভোল পাল্টিয়ে ৫ আগষ্টের পর সমন্বয়কদের সাথে ছবি তুলে সে নিজেকে এখন ছাত্র আন্দোলনে হাইমচরের বড় মাষ্টার মাইন্ড পরিচয় দিয়ে সামাজিক, ব্যবসায়ী ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এছাড়া ও তার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষের বসতবাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই যুবককে অছাত্র বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অভিযুক্তকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এছাড়া ও এলাকায় তাকে কানা হানিফা মিজির ছেলে শরিফ ওরফে কুট্টি নামের ছদ্ম নামে পরিচিত।তার বাবাকে চুরির দায়ে এলাকাবাসী কান কেটে দেওয়ায় তার বাবাকে কানা হানিফা নামে চিনে।
তবে চাঁদপুরের হাইমচরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেছেন, মামলার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা তোলার সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত নয়।
এদিকে,ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া শরিফ মিজি নিজে এবং লোক মারফত ভুক্তভোগীদের ডেকে নিয়ে বলেন, মামলা শুক্রবার রাতে হয়ে যাবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সহযোগিতা করতে পারছি না। রাত ১০টার মধ্যে এজাহার জমা দিয়ে দেবে। এজাহার জমা দিতে আমি নিজেও যাব। তোরা যদি টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করিস তবে এখনও মামলা বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে। আমি বাদ দেবো, সমস্যা নেই। এখানে আমরা ছাত্ররা বেশি। আমার সমন্বয়কের সংখ্যা বেশি,আমাদের কথায় এখন দেশ চলে। যদি মামলার বাদি আমি হতাম তাহলে নিয়ন্ত্রণ আমার হতো। আমি আমার পলিটিক্স কাউকে বুঝতে দেই না। তুই আবার কিছু মনে করিস না। টাকাটা আমি নিচ্ছি না। এটি বাকি সদস্যদের জন্য। তোর কাছে যখন টাকা, তাই তুই দেখেশুনে দিস।
রাকিব নামে এক ছাত্র বলেন, শরিফ মিজি অছাত্র হয়ে কীভাবে সমন্বয়ক হলো? সে একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও চুরি চিনতাই এর সাথে জড়িত ছিল।ঢাকায় গিয়ে গুলিস্তানে ব্যবসার সুবাদে কেন্দ্রীয় সমন্বয়দের সাথে পরিচয় হওয়ার পর তার অধিপত্যে এলাকায় এখন বেড়ে গেছে । কমিটিতে সে কীভাবে জায়গায় পেল প্রশ্ন সমন্বয়কদের কাছে।তবে ভুক্তভোগীরা নিজেদের নিরাপত্তার কারণে পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোঃ শরিফ মিজির মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কথিত অছাত্র শরিফ মিজির বিরুদ্ধে হাইমচরে বিভিন্ন দপ্তরে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে কথিত শরিফ মিজি নানাভাবে সর্বস্তরের মানুষকে হেনস্তা করছে।কারো কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা, কারো কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা, কারো কাছ থেকে দশ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে এলাকায় শেল্টার দেওয়ার জন্য। ৫ ই আগষ্ট এর পটপরিবর্তন এর পর সে চাঁদপুরের হাইমচরে একেক সময় এক এক রুপ ধরে প্রশাসনের নামে হুমকি ভয়ভীতি দিয়ে হয়রানি করছে নিত্যদিন।
হাইমচরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান হাবীব সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ প্রদান করে বলেন,শরিফ মিজি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদাবাজি ছাড়া ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি ধামকি দেন।ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ বলতে পারে না।
এ বিষয়ে হাইমচর থানার ওসি মহিউদ্দিন উদ্দিন সুমন বলেন,সে ২৪ এর আহত যোদ্ধা, সমন্বয়ক না,চাঁদাবাজি বা হয়রানি বিষয়ে তিনি অবগত নয় বলে জানান।
এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী অফিসার, উম্মে সালমা নাজনীন তৃষার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে শরিফ মিজি বিভিন্ন দপ্তরে অর্থ আদায় ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো ও বলেন,তার কথাবার্তা ও তেমন স্বভাবসুলভ নয়।প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে তা তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ছিল না।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি অথবা বিশেষ সুবিধা দাবি করলে তাদের নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করার আহ্বান জানান।