বিকেবি-রাকাব একত্রীকরন হলে উপকৃত হবে উত্তরের কৃষক
- আপলোড সময় : ০২:৩৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪
- / ৪৮৫ বার পড়া হয়েছে
১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির ২৭ নং আদেশ মূলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর থেকে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হু মু এরশাদ ১৯৮৬ সালে কৃষি ব্যাংককে চার ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্তের ১ম পর্যায়ে পরীক্ষামুলক ভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ৫৮ নং অধ্যাদেশ জারী করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে বিভক্ত করে রাকাব প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু পরবর্তীতে রাকাব প্রতিষ্ঠার আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় বাকী বিভাগগুলোতে কৃষি ব্যাংক বিভক্ত করেননি। সুতরাং এতে প্রমানিত হয় যে রাকাব প্রতিষ্ঠা করাই একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। যমুনার উত্তরপাড় তথা তৎকালীন রাজশাহী বিভাগে কার্যরত কৃষি ব্যাংকের শাখা সমুহ নিয়ে, রাজশাহীতে প্রধান কার্যালয় করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব গঠিত হয়।
১৫ মার্চ ১৯৮৭ এ ব্যাংকের যাত্রার মাঝেখানে উত্তরবঙ্গে রংপুর আলাদা বিভাগ হলে ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নামেই ব্যাংকটা অদ্যাবধি কার্যরত আছে। সম্প্রতি সরকার ব্যাংক দুটিকে পুনরায় একীভূত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে যা নি:সন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ।
এছাড়া আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে এরকম একই ধরনের প্রতিষ্ঠান একীভূত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে আঞ্চলিক ব্যাংক হিসেবের ডিপোজিট সংকট রয়েছে যা একমাত্র একীভূত করার মাধ্যমেই সম্ভব। বিকেবি, রাকাব সম্পূর্ণ সরকারী ব্যাংক। সরকারী নির্দেশনায় সরকারের ঋণ কার্যক্রমসহ সকল কাজে সহায়ক ভুমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর কৃষি ঋণ বিতরণ কর্মসূচী ঘোষণা করে যার উল্লেখযোগ্য অংশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে এ দু’টি ব্যাংকের উপর। এমনকি চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৫০০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে কার্যরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা ভাগ করে দেয়া হয়েছে যার মধ্যে শুধু বিকেবি-রাকাবের লক্ষ্যমাত্রা ৮৭৫০কোটি টাকা যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ২৫%। বর্তমানে ব্যাংক দু’টি একীভূত/মার্জ করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা সাধুবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। দুটি ব্যাংকেরই ঋণ কার্যক্রম, ডিপোজিট কার্যক্রমসহ সকল ধরনের পরিচালন কার্যক্রম, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন স্কেল, পদবী, পদসোপান একই ধরনের। বিকেবির শাখার সংখ্যা ১০৩৮ আর রাকাবের ৩৮৩, উভয় ব্যাকের সবগুলো শাখাই অনলাইন।
ব্যাংক দুটো একীভূত করে লাভ কি কি হতে পারে কিংবা যে কারনে বিকেবি-রাকাব একীভূত হলে রাকাবেরই ভাল। প্রথমত, ব্যাংক দুটো একীভূত করে তথা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা গেলে রাজশাহী প্রধান কার্যালয় বিলুপ্ত হবে ফলে পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাবে, পরিধারন কার্যক্রম সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, বিকেবি-রাকাব একীভূত হলে রাকাবেরই ভাল।বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি অনুসারে বিশেষায়িত ব্যাংকের জন্য এডি রেশিও হচ্ছে ৮৭ অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ৮৭ টাকা। কিন্তু রাকাবের এডি রেশিও ১১০ হওয়ায় কারনে কৃষকের চাহিদা থাকা সত্তেও রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের নতুন ঋণ দিতে পাচ্ছেনা আমানতের অভাবে। আবার আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হওয়ায় আমানতকারীদের আমানত ফেরত পাওয়া সময় সাপেক্ষ। অপর দিকে বিকেবির এডি রেশিও মাত্র ৭৮, যদি রাকাব- বিকেবি একীভূতকরণ করা হয় তাহলে কৃষি ব্যাংকের এডি রেশিও হবে ৮৩ সেক্ষেত্রে বিকেবির চেয়ে রাকাবের আমানতকারী আমানত ফেরত পাওয়া ও রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তিতে নতুন দাড় উন্মোচিত হবে যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যানকর এবং খাদ্য উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে ।
বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা বেশি আবার এই কৃষক পরিবারের সদস্যরাই মধ্য প্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে দেশে বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠায় কিন্তু রাকাবের সক্ষমতার অভাবে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের সেই কৃষকগণ রাকাব রেমিট্যান্স প্রদানের ক্ষেত্রে কোন সেবা দিতে পাচ্ছে না যার দৃষ্টান্ত হচ্ছে চলতি এপ্রিল’২০২৪ মাসের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত রাকাবের অর্জন ০.০০ (শুন্য) অপর দিকে বিকেবির ঈর্ষণীয় অর্জন সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে, ঠিক সেই মহুর্তে একটি কুচক্রি মহল (আঞ্চলিক সিন্ডিকেট) রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতা করছে। তৃতীয়ত, কৃষি প্রধান রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের মানুষের মাঝে রাকাব-বিকেবি একীভূত করে সেবা প্রদান করলে বিকেবির চেয়ে রাকাবই বেশী সুবিধাভোগী হবে।
চতুর্থত, সারাদেশের সমষ্টিক অর্থনীতির সাথে কৃষি অর্থনীতির গতি ফিরবে উত্তর জনপদে সবশেষে বলা যায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একইভূতকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র উত্তর জনপদের কৃষি অর্থনীতির বিপ্লব ঘটবে না তার সাথে রংপুর বিভাগের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিবর্তন ঘটবে বলে আশাবাদী।
এছাড়াও বিদেশি কোন এক্সচেঞ্জ কোম্পানির সাথে সরাসরি রাকাবের চুক্তি না থাকায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা গ্রাহকদের নিকট পৌছায় বিকেবি হয়ে। এতে গ্রাহকদের এ টাকা পেতে বিলম্ব হয়। সারা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক না থাকায় উভয় ব্যাংকের গ্রাহকই সারাদেশে লেনদেনে বাধাগ্রস্ত হন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বেশি ভুক্তভোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনাজপুরের খানসামায় মধ্যম, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ৩৮০০০ কৃষক পরিবার রয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক হতে শস্য, প্রাণী ও মৎস্য তিন বিভাগে ১২৮৩ জন কৃষক ১৫ কোটি ৪৩ লাখ ঋণ গ্রহণ করেছেন।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আবদুর রউফ তালুকদারকে অভিনন্দন ও কৃর্তঙ্গতা জানান কৃষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষ সব সময় অবহেলিত। আমরা কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষির অবদান অনেক বেশি।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, আমি একজন গরিব কৃষক। অন্যের জমিতে চাষ করে সংসার চালাই। প্রায় সময়ে আমি ঋণের মধ্যে পড়ে যাই। কৃষি ঋণ নিতে অনেক গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। শুনেছি দুই ব্যাংক একখানে হচ্ছে। এটা মহা খুশির খবর। একত্রে হলে আমরা কৃষকরা অনেক সুবিধা পাবো।
খানসামা বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাপড় ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি নিজেই কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা। আমরা মহাজনের কাছে টাকা পাঠাইতে গেলে অন্যান্য ব্যাংকের শরণাপন্ন হতে হয়। আমরা চাই ব্যাংক দুটি একত্রে হলে আমরা উপকৃত হবো এবং দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।