ইসলাম সমান অধিকারের নয় বরং ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য

- আপলোড সময় : ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / ২৫১ বার পড়া হয়েছে
অধিকার” (Equal Rights) একটি জনপ্রিয় স্লোগান। কিন্তু ইসলামের দর্শনে অধিকারের ভিত্তি সমতা নয়, বরং ইনসাফ—অর্থাৎ ন্যায়বিচার। ইসলাম প্রতিটি মানুষকে তার যোগ্যতা, প্রয়োজন ও দায়িত্ব অনুসারে ন্যায্য অধিকার প্রদান করে। এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী পদ্ধতি, যা সমাজে প্রকৃত শান্তি ও সুবিচার নিশ্চিত করে।
সমান অধিকার বনাম ন্যায় অধিকার: পার্থক্য
সমান অধিকার মানে সকলকে একই রকম সুবিধা বা অধিকার দেওয়া—যোগ্যতা, অবস্থা বা দায়িত্ব নির্বিশেষে। অপরদিকে, ন্যায় অধিকার বা ইনসাফ হলো প্রত্যেককে তার যোগ্যতা, প্রয়োজনে ও দায়িত্বের ভিত্তিতে তার ন্যায্য প্রাপ্য প্রদান করা।
উদাহরণ:
* একজন বাবা তার ৫ বছর ও ২০ বছরের সন্তানের মাঝে সমান দায়িত্ব দিলে সেটা হবে অবিচার। কিন্তু তাদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব দিলে সেটিই ইনসাফ।
* একইভাবে, একজন শিক্ষক সব শিক্ষার্থীকে সমান নম্বর না দিয়ে, তাদের মেধা অনুযায়ী মূল্যায়ন করলে তা ইনসাফ হবে।
ইসলামে ইনসাফের গুরুত্ব:
ইসলাম ইনসাফকে একটি মৌলিক মূল্যবোধ ও ইসলামী রাষ্ট্রনীতি হিসেবে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন:
﴿إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ﴾
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ ও সদাচরণ করার নির্দেশ দেন।”
— (সূরা আন-নাহল: ৯০)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«المقسطون عند الله على منابر من نور…»
“ন্যায়পরায়ণরা আল্লাহর কাছে নূরের মিম্বরে অবস্থান করবে।”
— (সহীহ মুসলিম)
নারী-পুরুষ সম্পর্ক: সমতা নয়, ইনসাফ:
* আধুনিক নারীবাদ নারী ও পুরুষকে সবক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার দাবি করে, কিন্তু ইসলাম নারী ও পুরুষকে পৃথক ভূমিকায় ও স্বতন্ত্র গুণাবলির উপর ভিত্তি করে ন্যায়সঙ্গত অধিকার দিয়েছে। যেমন: করে
* পিতা-মাতার সম্পত্তিতে পুত্রকে দ্বিগুণ, কন্যাকে একগুণ দেওয়া হয় (সূরা নিসা: ১১)। এটি সমান নয়, বরং পরিবারের আর্থিক দায়িত্বের ভিত্তিতে ন্যায্য বণ্টন।
* পুরুষকে পরিবারের উপার্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নারীকে নয় (সূরা নিসা: ৩৪)। তাই পুরুষের অধিক সম্পদ পাওয়া ইনসাফ।
শাস্তির ক্ষেত্রেও ইনসাফ:
ইসলামে শাস্তি নির্ধারণে ব্যক্তির অবস্থা বিবেচনা করা হয়। যেমন:
* কেউ ভুলক্রমে হত্যা করলে তার জন্য কাফফারা নির্ধারিত, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড।
* অভাবী চোরের জন্য শাস্তি কম হতে পারে, কিন্তু পেশাদার চোরের জন্য কঠোর শাস্তি।
ইসলামের ইনসাফনীতি বাস্তবসম্মত ও চিরন্তন:
ইনসাফের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমাজই প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও উন্নত হয়। সমতা (Equality) অনেক ক্ষেত্রে অবিচার সৃষ্টি করে, যেখানে ইনসাফ (Justice) সকলকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে সমাজে ভারসাম্য তৈরি করে।
উপসংহার:
ইসলাম কখনোই চোখ বন্ধ করে সমান অধিকার দেওয়ার পক্ষে নয়। বরং ইসলাম প্রত্যেককে তার অবস্থান, দায়িত্ব ও প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রদান করে। ইনসাফের এই মহান নীতি মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দেয় এবং সমাজে সাম্য, শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। তাই বলা যায়—ইসলাম সমান অধিকারে নয়, বরং ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে।