ঢাকা ০৩:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলাম সমান অধিকারের নয় বরং ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য

আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
  • আপলোড সময় : ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • / ২৫১ বার পড়া হয়েছে

অধিকার” (Equal Rights) একটি জনপ্রিয় স্লোগান। কিন্তু ইসলামের দর্শনে অধিকারের ভিত্তি সমতা নয়, বরং ইনসাফ—অর্থাৎ ন্যায়বিচার। ইসলাম প্রতিটি মানুষকে তার যোগ্যতা, প্রয়োজন ও দায়িত্ব অনুসারে ন্যায্য অধিকার প্রদান করে। এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী পদ্ধতি, যা সমাজে প্রকৃত শান্তি ও সুবিচার নিশ্চিত করে।

সমান অধিকার বনাম ন্যায় অধিকার: পার্থক্য

সমান অধিকার মানে সকলকে একই রকম সুবিধা বা অধিকার দেওয়া—যোগ্যতা, অবস্থা বা দায়িত্ব নির্বিশেষে। অপরদিকে, ন্যায় অধিকার বা ইনসাফ হলো প্রত্যেককে তার যোগ্যতা, প্রয়োজনে ও দায়িত্বের ভিত্তিতে তার ন্যায্য প্রাপ্য প্রদান করা।

উদাহরণ:
* একজন বাবা তার ৫ বছর ও ২০ বছরের সন্তানের মাঝে সমান দায়িত্ব দিলে সেটা হবে অবিচার। কিন্তু তাদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব দিলে সেটিই ইনসাফ।

* একইভাবে, একজন শিক্ষক সব শিক্ষার্থীকে সমান নম্বর না দিয়ে, তাদের মেধা অনুযায়ী মূল্যায়ন করলে তা ইনসাফ হবে।

ইসলামে ইনসাফের গুরুত্ব:
ইসলাম ইনসাফকে একটি মৌলিক মূল্যবোধ ও ইসলামী রাষ্ট্রনীতি হিসেবে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন:

﴿إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ﴾
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ ও সদাচরণ করার নির্দেশ দেন।”
— (সূরা আন-নাহল: ৯০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«المقسطون عند الله على منابر من نور…»
“ন্যায়পরায়ণরা আল্লাহর কাছে নূরের মিম্বরে অবস্থান করবে।”
— (সহীহ মুসলিম)

নারী-পুরুষ সম্পর্ক: সমতা নয়, ইনসাফ:
* আধুনিক নারীবাদ নারী ও পুরুষকে সবক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার দাবি করে, কিন্তু ইসলাম নারী ও পুরুষকে পৃথক ভূমিকায় ও স্বতন্ত্র গুণাবলির উপর ভিত্তি করে ন্যায়সঙ্গত অধিকার দিয়েছে। যেমন: করে
* পিতা-মাতার সম্পত্তিতে পুত্রকে দ্বিগুণ, কন্যাকে একগুণ দেওয়া হয় (সূরা নিসা: ১১)। এটি সমান নয়, বরং পরিবারের আর্থিক দায়িত্বের ভিত্তিতে ন্যায্য বণ্টন।
* পুরুষকে পরিবারের উপার্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নারীকে নয় (সূরা নিসা: ৩৪)। তাই পুরুষের অধিক সম্পদ পাওয়া ইনসাফ।

শাস্তির ক্ষেত্রেও ইনসাফ:
ইসলামে শাস্তি নির্ধারণে ব্যক্তির অবস্থা বিবেচনা করা হয়। যেমন:
* কেউ ভুলক্রমে হত্যা করলে তার জন্য কাফফারা নির্ধারিত, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড।
* অভাবী চোরের জন্য শাস্তি কম হতে পারে, কিন্তু পেশাদার চোরের জন্য কঠোর শাস্তি।

ইসলামের ইনসাফনীতি বাস্তবসম্মত ও চিরন্তন:
ইনসাফের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমাজই প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও উন্নত হয়। সমতা (Equality) অনেক ক্ষেত্রে অবিচার সৃষ্টি করে, যেখানে ইনসাফ (Justice) সকলকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে সমাজে ভারসাম্য তৈরি করে।

উপসংহার:
ইসলাম কখনোই চোখ বন্ধ করে সমান অধিকার দেওয়ার পক্ষে নয়। বরং ইসলাম প্রত্যেককে তার অবস্থান, দায়িত্ব ও প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রদান করে। ইনসাফের এই মহান নীতি মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দেয় এবং সমাজে সাম্য, শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। তাই বলা যায়—ইসলাম সমান অধিকারে নয়, বরং ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইসলাম সমান অধিকারের নয় বরং ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য

আপলোড সময় : ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

অধিকার” (Equal Rights) একটি জনপ্রিয় স্লোগান। কিন্তু ইসলামের দর্শনে অধিকারের ভিত্তি সমতা নয়, বরং ইনসাফ—অর্থাৎ ন্যায়বিচার। ইসলাম প্রতিটি মানুষকে তার যোগ্যতা, প্রয়োজন ও দায়িত্ব অনুসারে ন্যায্য অধিকার প্রদান করে। এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী পদ্ধতি, যা সমাজে প্রকৃত শান্তি ও সুবিচার নিশ্চিত করে।

সমান অধিকার বনাম ন্যায় অধিকার: পার্থক্য

সমান অধিকার মানে সকলকে একই রকম সুবিধা বা অধিকার দেওয়া—যোগ্যতা, অবস্থা বা দায়িত্ব নির্বিশেষে। অপরদিকে, ন্যায় অধিকার বা ইনসাফ হলো প্রত্যেককে তার যোগ্যতা, প্রয়োজনে ও দায়িত্বের ভিত্তিতে তার ন্যায্য প্রাপ্য প্রদান করা।

উদাহরণ:
* একজন বাবা তার ৫ বছর ও ২০ বছরের সন্তানের মাঝে সমান দায়িত্ব দিলে সেটা হবে অবিচার। কিন্তু তাদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব দিলে সেটিই ইনসাফ।

* একইভাবে, একজন শিক্ষক সব শিক্ষার্থীকে সমান নম্বর না দিয়ে, তাদের মেধা অনুযায়ী মূল্যায়ন করলে তা ইনসাফ হবে।

ইসলামে ইনসাফের গুরুত্ব:
ইসলাম ইনসাফকে একটি মৌলিক মূল্যবোধ ও ইসলামী রাষ্ট্রনীতি হিসেবে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন:

﴿إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ﴾
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ ও সদাচরণ করার নির্দেশ দেন।”
— (সূরা আন-নাহল: ৯০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«المقسطون عند الله على منابر من نور…»
“ন্যায়পরায়ণরা আল্লাহর কাছে নূরের মিম্বরে অবস্থান করবে।”
— (সহীহ মুসলিম)

নারী-পুরুষ সম্পর্ক: সমতা নয়, ইনসাফ:
* আধুনিক নারীবাদ নারী ও পুরুষকে সবক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার দাবি করে, কিন্তু ইসলাম নারী ও পুরুষকে পৃথক ভূমিকায় ও স্বতন্ত্র গুণাবলির উপর ভিত্তি করে ন্যায়সঙ্গত অধিকার দিয়েছে। যেমন: করে
* পিতা-মাতার সম্পত্তিতে পুত্রকে দ্বিগুণ, কন্যাকে একগুণ দেওয়া হয় (সূরা নিসা: ১১)। এটি সমান নয়, বরং পরিবারের আর্থিক দায়িত্বের ভিত্তিতে ন্যায্য বণ্টন।
* পুরুষকে পরিবারের উপার্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নারীকে নয় (সূরা নিসা: ৩৪)। তাই পুরুষের অধিক সম্পদ পাওয়া ইনসাফ।

শাস্তির ক্ষেত্রেও ইনসাফ:
ইসলামে শাস্তি নির্ধারণে ব্যক্তির অবস্থা বিবেচনা করা হয়। যেমন:
* কেউ ভুলক্রমে হত্যা করলে তার জন্য কাফফারা নির্ধারিত, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড।
* অভাবী চোরের জন্য শাস্তি কম হতে পারে, কিন্তু পেশাদার চোরের জন্য কঠোর শাস্তি।

ইসলামের ইনসাফনীতি বাস্তবসম্মত ও চিরন্তন:
ইনসাফের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমাজই প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও উন্নত হয়। সমতা (Equality) অনেক ক্ষেত্রে অবিচার সৃষ্টি করে, যেখানে ইনসাফ (Justice) সকলকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে সমাজে ভারসাম্য তৈরি করে।

উপসংহার:
ইসলাম কখনোই চোখ বন্ধ করে সমান অধিকার দেওয়ার পক্ষে নয়। বরং ইসলাম প্রত্যেককে তার অবস্থান, দায়িত্ব ও প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রদান করে। ইনসাফের এই মহান নীতি মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দেয় এবং সমাজে সাম্য, শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। তাই বলা যায়—ইসলাম সমান অধিকারে নয়, বরং ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন