ঢাকা ০৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোড সময় : ১০:১৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৭৪০ বার পড়া হয়েছে

সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে রংপুর শহর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে সাতটি পথসভাসহ ৯টি স্থানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এসব পথসভা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
পথসভার বক্তব্যে উপস্থিত জনগণের কাছে মির্জা ফখরুলের জিজ্ঞাসা ছিল, এই সরকার আবার একটা যেনতেন নির্বাচন করতে চায়। আপনারা কি সেই একতরফা নির্বাচন হতে দেবেন? তখন উপস্থিত জনতা সমস্বরে জবাব দেন—‘না’। এ সময় মির্জা ফখরুল জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা এই সরকারকে একতরফা নির্বাচন করতে দেব না। এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, মানে মানে কথা শুনুন, দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। অতীতে যেভাবে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে, আপনাদের পতন সেভাবে ঘটানো হবে। সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। জাগরণের মাধ্যমে তরুণদের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে মুক্ত করা হবে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এখনই এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।

শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় রংপুর জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রোডমার্চ শুরু হয়। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিকেল ৫টায় দিনাজপুর শহরে পৌঁছে রোডমার্চের গাড়িবহর। রোডমার্চে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে অংশ নেন। পথে পথে রংপুর, সৈয়দপুর, নিলফামারী, দিনাজপুরসহ আশপাশের ৮টি জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গাড়ি নিয়ে রোডমার্চে যোগ দেন। একপর্যায়ে রোডমার্চের গাড়িবহর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে যায়।

দিনাজপুর শহরের ট্রাক স্টেশন মাঠে প্রথম দিনের রোডমার্চ শেষে সমাপনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচিত নয়। জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আবার এক তরফা নির্বাচন করতে চায়। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার আপনার জারিজুরি খাটবে না। দেশের মানুষ ও সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। তাদের আর বোকা বানাতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আবার পাতানো নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে তারা। সেজন্য সব আয়োজন করছে। নিজের ইচ্ছামতো ডিসি-এসপি নিয়োগ দিয়েছে, এটা মানুষ মেনে নেবে না।

এর আগে সৈয়দপুরে পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এবার জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। পুলিশ, র‌্যাব দিয়ে ভোট নিয়ে যাবেন, মানুষকে বোকা বানাবেন, এবার এটা হবে না।

তারাগঞ্জে পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের বিদায় অবশ্যম্ভাবী। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আপনারা কি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন চান? জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘না’।

বেলা সোয়া ১১টায় রংপুর জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে তারুণ্যের রোডমার্চ উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। তাই বিনীত অনুরোধ করব, এখন এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় লোক দিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন।

তিনি বলেন, আজকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের এক দফা দাবি যদি না মেনে নেয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। কারণ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর আগে ‘কুত্তা মার্কা’ নির্বাচন হয়েছে। কারণ তখন ভোটকেন্দ্রে শুধু কুকুর ছিল। সুতরাং আমরা সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আদালতে গেলে জামিন দেওয়া হয় না বিরোধী আন্দোলনকারী দলগুলোকে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন করতে পারি তাহলে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করব।

রংপুর দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে রোডমার্চ শুরুর পর পাগলাপীর বাজার, তারাগঞ্জ বাজার রোড, সৈয়দপুর ট্রাক স্ট্যান্ড, সৈয়দপুর ওয়াবদা মোড়, দিনাজপুরের রানীর বন্দর, দশ-মাইলে পথসভা হয়। পথে পথে রোডমার্চের বহরে যুক্ত হন ৮ জেলার নেতাকর্মীরা।

দিনাজপুর শহরের ট্রাকস্ট্যান্ডে সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। বক্তব্য দেন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না: ফখরুল

আপলোড সময় : ১০:১৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে রংপুর শহর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে সাতটি পথসভাসহ ৯টি স্থানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এসব পথসভা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
পথসভার বক্তব্যে উপস্থিত জনগণের কাছে মির্জা ফখরুলের জিজ্ঞাসা ছিল, এই সরকার আবার একটা যেনতেন নির্বাচন করতে চায়। আপনারা কি সেই একতরফা নির্বাচন হতে দেবেন? তখন উপস্থিত জনতা সমস্বরে জবাব দেন—‘না’। এ সময় মির্জা ফখরুল জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা এই সরকারকে একতরফা নির্বাচন করতে দেব না। এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, মানে মানে কথা শুনুন, দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। অতীতে যেভাবে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে, আপনাদের পতন সেভাবে ঘটানো হবে। সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। জাগরণের মাধ্যমে তরুণদের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে মুক্ত করা হবে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এখনই এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।

শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় রংপুর জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রোডমার্চ শুরু হয়। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিকেল ৫টায় দিনাজপুর শহরে পৌঁছে রোডমার্চের গাড়িবহর। রোডমার্চে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে অংশ নেন। পথে পথে রংপুর, সৈয়দপুর, নিলফামারী, দিনাজপুরসহ আশপাশের ৮টি জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গাড়ি নিয়ে রোডমার্চে যোগ দেন। একপর্যায়ে রোডমার্চের গাড়িবহর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে যায়।

দিনাজপুর শহরের ট্রাক স্টেশন মাঠে প্রথম দিনের রোডমার্চ শেষে সমাপনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচিত নয়। জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আবার এক তরফা নির্বাচন করতে চায়। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার আপনার জারিজুরি খাটবে না। দেশের মানুষ ও সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। তাদের আর বোকা বানাতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আবার পাতানো নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে তারা। সেজন্য সব আয়োজন করছে। নিজের ইচ্ছামতো ডিসি-এসপি নিয়োগ দিয়েছে, এটা মানুষ মেনে নেবে না।

এর আগে সৈয়দপুরে পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এবার জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। পুলিশ, র‌্যাব দিয়ে ভোট নিয়ে যাবেন, মানুষকে বোকা বানাবেন, এবার এটা হবে না।

তারাগঞ্জে পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের বিদায় অবশ্যম্ভাবী। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আপনারা কি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন চান? জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘না’।

বেলা সোয়া ১১টায় রংপুর জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে তারুণ্যের রোডমার্চ উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। তাই বিনীত অনুরোধ করব, এখন এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় লোক দিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন।

তিনি বলেন, আজকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের এক দফা দাবি যদি না মেনে নেয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। কারণ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর আগে ‘কুত্তা মার্কা’ নির্বাচন হয়েছে। কারণ তখন ভোটকেন্দ্রে শুধু কুকুর ছিল। সুতরাং আমরা সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আদালতে গেলে জামিন দেওয়া হয় না বিরোধী আন্দোলনকারী দলগুলোকে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন করতে পারি তাহলে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করব।

রংপুর দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে রোডমার্চ শুরুর পর পাগলাপীর বাজার, তারাগঞ্জ বাজার রোড, সৈয়দপুর ট্রাক স্ট্যান্ড, সৈয়দপুর ওয়াবদা মোড়, দিনাজপুরের রানীর বন্দর, দশ-মাইলে পথসভা হয়। পথে পথে রোডমার্চের বহরে যুক্ত হন ৮ জেলার নেতাকর্মীরা।

দিনাজপুর শহরের ট্রাকস্ট্যান্ডে সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। বক্তব্য দেন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন