ঢাকা ০৪:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন-আমি দেশের সম্পদ রক্ষায় কাজ করছি

মোঃ সালে আহমেদ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
মোঃ সালে আহমেদ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
  • আপলোড সময় : ০৯:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২১৬ বার পড়া হয়েছে

সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিষ্টেম লস জ্বালানি খাতে বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের বেধে দেয়া সিস্টেম লস এর চেয়েও বিতরণ কোম্পানিগুলো অধিক হারে সিস্টেম লস করছে।যার মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ১০.৭৮ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৬.৩৮ শতাংশ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ১.৩৪ শতাংশ, কর্নফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২.০৫ শতাংশ লোকসান দেখিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রান্তে সরবরাহকৃত গ্যাসের সঠিক পরিমাপ নিরুপনের লক্ষ্যে অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টে মিটারিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা হয়েছে। এতে করে কোম্পানি লোকশান দেখাতো আবার কোম্পানি গুলোর কর্মকর্তারা বাড়তি আয় হিসেবে প্রফিট বোনাসের নামে দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিতো। এসব বর্তমান চেয়ারম্যান বন্ধ করে দেয়ার কারণে এক দিকে দেশের সম্পদ রক্ষা হয়েছে অন্যদিকে গ্যাসের চুরি বন্ধ হচ্ছে।

এছারাও পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্তত অনুসন্ধানে স্থবিরতা এই কথা বলার আর সুযোগ থাকছে না। দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলছে ৪৮ কূপ খনন প্রকল্প। ইতোমধ্যেই ওই কর্মসূচির সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ১৫টি খনন করা হয়েছে এবং সেখান থেকে প্রতিদিন ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মিলেছে।এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমে যাবে।

বর্তমানে দেশে বিভিন্ন কূপ থেকে উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে সরকারকে। দেশের উৎপাদিত গ্যাসের মূল্য সরকার ১ টাকা ঘনমিটার দরে কিনে থাকলেও বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্যাসের দাম ৭১ টাকা ঘন মিটার দরে আমদানি করতে হয়। যার কারনে জ্বালানি খাতে খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। দেশের বেশ কয়েকটি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে অন্যতম তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র সিস্টেম লস নিয়ে চিন্তিত জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কারণ অন্য বিতরণ কোম্পানির সিস্টেম গেন করলেও তিতাসের সিস্টেম লস এর প্রধান কারণ বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হয়ে যাওয়া। গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস ঢাকার ও আশপাশের জেলা গুলোই গ্যাস বিতরণ করে। শিল্প ঘন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিপুল সংখ্যক অবৈধ ব্যবহারের কারণেই সিস্টেম লস প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিতাসের সিস্টেম লস শুন্যের কোথায় নামিয়ে আনতে জ্বালানি বিভাগের তৎপরতা সব সময়ই রয়েছে।সিস্টেম লস কমাতে তিতাস প্রত্যেক বিতরণ এলাকায় নিজস্ব মিটার স্থাপন করেছে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো জিটিসিএল এর মাধ্যমে গ্যাস পেয়ে থাকে। বর্তমান প্রবর্তিত পদ্ধতিতে গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি,আইওসি এবং আরএলএনজি উৎস সমূহ হতে মোট ২১টি পয়েন্টে মিটারিং এর মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণ করছে এবং ৬৩ টি অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্ট এর মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানি সমূহে সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০১৮ সালের এক আদেশে জিটিসিএল বিতরণ কোম্পানির ইনটেক পয়েন্ট এর বিদ্যমান মিটারিং ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশনা প্রদান করে। ওই নির্দেশনার পরে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পূর্বের পদ্ধতি বাতিল করে অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টের (জিটিসিএল বা বিতরণ কোম্পানি কর্তৃক স্থাপিত স্টেশন) মিটারিং অনুযায়ী কোম্পানি ভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বিভাজন করবে। সেই অনুযায়ী বিতরণ কোম্পানি সমূহ গ্যাস বিল (উৎপাদন,সঞ্চালন, আইওসি, এলএনজি, পেট্রোবাংলা ও অন্যান্য চার্জ সমূহ) যথাসময়ে পরিশোধের ব্যবস্থা করবে বলে সুপারিশ দেয়।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি হতে মিটার ব্যবস্থাপনা চূড়ান্তকরণের পরিপ্রেক্ষিতে জিটিসিএল বর্তমানের দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি(বিজিএফসিএল-৯টি, এসজিএফএল-৩টি,ও বাপেক্স-৩টি) ও আইওসি কোম্পানি (শেভরন-৩টি,তাল্লো-১টি) এবং আরএলএনজি(আরপিজিসিএল-২টি) হতে মোট ২১ টি পয়েন্টে উৎসে মিটারিং এর মাধ্যমে মোট গ্যাস সরবরাহের ৭০-৮০ শতাংশ গ্যাস গ্রহণ করছে, যা পরবর্তীতে জিটিসিএল কর্তৃক জাতীয় গ্রিড পাইপ লাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করে ৬টি বিতরণ কোম্পানিতে বর্তমানে মোট ৬৩ টি অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টে (ডিজিটিডিপিএলসি এর সাথে ২৫ টি, বিজিডিসিএল এর সাথে ১৩ টি, জেজিটিডিএসএল এর সাথে ৮ টি, পিজিসিএল এর সাথে ৮টি, কেজিডিসিএলের সাথে ৭টি এবং এসজিসিএল এর সাথে ২টি) মিটারিং এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব মিটারিং ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত যৌথভাবে মিটার রিডিং গ্রহণ, যৌথ ক্যালিব্রেশন, হিসাব করন(গ্যাস বিভাজন, ক্রয়, বিক্রয় বিলিং) কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া মোট গ্যাস সরবরাহের অবশিষ্ট ২০-৩০% গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সমূহ অর্থাৎ টিজিটিডিপিএলসি ৪ টি পয়েন্ট,(বিজিএফসিএল-৪টি ) বিজিডিএসএল ২টি পয়েন্ট,(বাপেক্স ২ টি) জেজিটিডিএসএল ৭ টি পয়েন্ট (বিজিএফসিএল-১ টি, এসজিএফএল-৩টি, শেভরন ৩ টি), কেজিডিসিএল ১টি পয়েন্ট (বাপেক্স-টি) এবং এসজিসিএল ১টি পয়েন্ট(বাপেক্স-১টি) এর মাধ্যমে সরাসরি গ্যাস ফিল্ড হতে মোট ১৫টি পয়েন্টে মিটারিং

এর মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণ করে নিজস্ব সিস্টেমে সঞ্চালন পূর্বক বিতরণ ও বিপনণ করছে।জিটিসিএল কর্তৃক ২১ টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইনটেক এবং বিতরণ কোম্পানি সমূহ কর্তৃক সরাসরি গ্যাস ফিল্ড হতে ১৫ টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইনটেক হচ্ছে উৎসে মোট গ্যাস গ্রহণ সরবরাহ।

একান্ত সাক্ষাৎকারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন,”বিতরণ কোম্পানি তিতাস কে বলে দেওয়া হয়েছে তাদের বর্তমান সিষ্টেম লস আরো কমাতে হবে, গত কয়েক বছরে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস তাদের সিস্টেম লস অনেকটাই কমিয়ে এনেছে, বর্তমানে তিতাসের সিস্টেম লস ৫ শতাংশ কিন্তু সিস্টেম লস তিন শতাংশের বেশি কাম্য নয়, এজন্য তিতাসের বিতরণ লাইনে নতুন করে মিটার বসানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরো বলেন, তিতাস গ্যাসের লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ রয়েছে, বিশেষ করে বাসা বাড়িতে অবৈধ সংযোগ কাটতে গেলে অনেক সময় তালা বদ্ধ করে পালিয়ে যায় ভবন মালিকরা, তখন তিতাসের পক্ষ থেকে কিছুই করার থাকে না, এজন্য ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করাটা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। আমরা জ্বালানি বিভাগের কাছে তিতাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আসছিলাম, তবে আশার কথা হচ্ছে তিতাসের জন্য সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এখন থেকে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলো গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ সাভার কেরানীগঞ্জ সোনারগাঁ সব এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে। এবং এসব এলাকায় এক একটি দলে তিতাসের পঞ্চাশ জনের অধিক করে জনবল থাকবে যাতে যেদিন যেই এলাকায় অভিযান পরিচালিত হবে সেই এলাকার সমস্ত অবৈধ সংযোগ তুলে আনা যায়। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জ্বালানি খাতে লোকসান কমিয়ে আনতে খুবই যুগোপযোগী ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করেন।

তবে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে ভারতীয়-বিদেশি চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ পন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখন বিএনপি-জামায়াত সেজে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেঘেছে। এদের অনৈতিক কাজ এবং সিস্টেম লসের নামে চুরি ঠেকাতে বিপাকে পড়েছেন। গত ৫ তারিখের পড়ে যেসব ঘটনা ঘছে তা আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তারা করছে। তবে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন কিছুই করার সাহস পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রোবাংলা গতিশীল থাকলে অনেকের ব্যবসা, কারো কারো উপরি আয় বন্ধ হয়ে যাবে, যে কারণে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে দেশী-বিদেশি চক্র সব সময় সক্রিয়। পেট্রোবাংলার যে কোনো ভালো কাজ বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং দক্ষ কর্মকর্তাদের এখানে থিতু হতে দেওয়া হয়নি। মাসের পর মাস এই চক্রটি দেশের খনিজ সম্পদ নষ্ট করছে এবং একটি বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়া তদবীর চালিয়ে আসছেন। আমি যোগদানের পড়ে এসব চুরি বন্ধ করেছি। এ কারণে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। আমি দেশের সম্পদ রক্ষায় কাজ করছি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন-আমি দেশের সম্পদ রক্ষায় কাজ করছি

আপলোড সময় : ০৯:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিষ্টেম লস জ্বালানি খাতে বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের বেধে দেয়া সিস্টেম লস এর চেয়েও বিতরণ কোম্পানিগুলো অধিক হারে সিস্টেম লস করছে।যার মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ১০.৭৮ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৬.৩৮ শতাংশ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ১.৩৪ শতাংশ, কর্নফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২.০৫ শতাংশ লোকসান দেখিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রান্তে সরবরাহকৃত গ্যাসের সঠিক পরিমাপ নিরুপনের লক্ষ্যে অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টে মিটারিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা হয়েছে। এতে করে কোম্পানি লোকশান দেখাতো আবার কোম্পানি গুলোর কর্মকর্তারা বাড়তি আয় হিসেবে প্রফিট বোনাসের নামে দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিতো। এসব বর্তমান চেয়ারম্যান বন্ধ করে দেয়ার কারণে এক দিকে দেশের সম্পদ রক্ষা হয়েছে অন্যদিকে গ্যাসের চুরি বন্ধ হচ্ছে।

এছারাও পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্তত অনুসন্ধানে স্থবিরতা এই কথা বলার আর সুযোগ থাকছে না। দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলছে ৪৮ কূপ খনন প্রকল্প। ইতোমধ্যেই ওই কর্মসূচির সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ১৫টি খনন করা হয়েছে এবং সেখান থেকে প্রতিদিন ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মিলেছে।এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমে যাবে।

বর্তমানে দেশে বিভিন্ন কূপ থেকে উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে সরকারকে। দেশের উৎপাদিত গ্যাসের মূল্য সরকার ১ টাকা ঘনমিটার দরে কিনে থাকলেও বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্যাসের দাম ৭১ টাকা ঘন মিটার দরে আমদানি করতে হয়। যার কারনে জ্বালানি খাতে খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। দেশের বেশ কয়েকটি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে অন্যতম তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র সিস্টেম লস নিয়ে চিন্তিত জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কারণ অন্য বিতরণ কোম্পানির সিস্টেম গেন করলেও তিতাসের সিস্টেম লস এর প্রধান কারণ বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হয়ে যাওয়া। গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস ঢাকার ও আশপাশের জেলা গুলোই গ্যাস বিতরণ করে। শিল্প ঘন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিপুল সংখ্যক অবৈধ ব্যবহারের কারণেই সিস্টেম লস প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিতাসের সিস্টেম লস শুন্যের কোথায় নামিয়ে আনতে জ্বালানি বিভাগের তৎপরতা সব সময়ই রয়েছে।সিস্টেম লস কমাতে তিতাস প্রত্যেক বিতরণ এলাকায় নিজস্ব মিটার স্থাপন করেছে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো জিটিসিএল এর মাধ্যমে গ্যাস পেয়ে থাকে। বর্তমান প্রবর্তিত পদ্ধতিতে গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি,আইওসি এবং আরএলএনজি উৎস সমূহ হতে মোট ২১টি পয়েন্টে মিটারিং এর মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণ করছে এবং ৬৩ টি অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্ট এর মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানি সমূহে সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০১৮ সালের এক আদেশে জিটিসিএল বিতরণ কোম্পানির ইনটেক পয়েন্ট এর বিদ্যমান মিটারিং ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশনা প্রদান করে। ওই নির্দেশনার পরে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পূর্বের পদ্ধতি বাতিল করে অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টের (জিটিসিএল বা বিতরণ কোম্পানি কর্তৃক স্থাপিত স্টেশন) মিটারিং অনুযায়ী কোম্পানি ভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বিভাজন করবে। সেই অনুযায়ী বিতরণ কোম্পানি সমূহ গ্যাস বিল (উৎপাদন,সঞ্চালন, আইওসি, এলএনজি, পেট্রোবাংলা ও অন্যান্য চার্জ সমূহ) যথাসময়ে পরিশোধের ব্যবস্থা করবে বলে সুপারিশ দেয়।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি হতে মিটার ব্যবস্থাপনা চূড়ান্তকরণের পরিপ্রেক্ষিতে জিটিসিএল বর্তমানের দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি(বিজিএফসিএল-৯টি, এসজিএফএল-৩টি,ও বাপেক্স-৩টি) ও আইওসি কোম্পানি (শেভরন-৩টি,তাল্লো-১টি) এবং আরএলএনজি(আরপিজিসিএল-২টি) হতে মোট ২১ টি পয়েন্টে উৎসে মিটারিং এর মাধ্যমে মোট গ্যাস সরবরাহের ৭০-৮০ শতাংশ গ্যাস গ্রহণ করছে, যা পরবর্তীতে জিটিসিএল কর্তৃক জাতীয় গ্রিড পাইপ লাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করে ৬টি বিতরণ কোম্পানিতে বর্তমানে মোট ৬৩ টি অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টে (ডিজিটিডিপিএলসি এর সাথে ২৫ টি, বিজিডিসিএল এর সাথে ১৩ টি, জেজিটিডিএসএল এর সাথে ৮ টি, পিজিসিএল এর সাথে ৮টি, কেজিডিসিএলের সাথে ৭টি এবং এসজিসিএল এর সাথে ২টি) মিটারিং এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব মিটারিং ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত যৌথভাবে মিটার রিডিং গ্রহণ, যৌথ ক্যালিব্রেশন, হিসাব করন(গ্যাস বিভাজন, ক্রয়, বিক্রয় বিলিং) কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া মোট গ্যাস সরবরাহের অবশিষ্ট ২০-৩০% গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সমূহ অর্থাৎ টিজিটিডিপিএলসি ৪ টি পয়েন্ট,(বিজিএফসিএল-৪টি ) বিজিডিএসএল ২টি পয়েন্ট,(বাপেক্স ২ টি) জেজিটিডিএসএল ৭ টি পয়েন্ট (বিজিএফসিএল-১ টি, এসজিএফএল-৩টি, শেভরন ৩ টি), কেজিডিসিএল ১টি পয়েন্ট (বাপেক্স-টি) এবং এসজিসিএল ১টি পয়েন্ট(বাপেক্স-১টি) এর মাধ্যমে সরাসরি গ্যাস ফিল্ড হতে মোট ১৫টি পয়েন্টে মিটারিং

এর মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণ করে নিজস্ব সিস্টেমে সঞ্চালন পূর্বক বিতরণ ও বিপনণ করছে।জিটিসিএল কর্তৃক ২১ টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইনটেক এবং বিতরণ কোম্পানি সমূহ কর্তৃক সরাসরি গ্যাস ফিল্ড হতে ১৫ টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইনটেক হচ্ছে উৎসে মোট গ্যাস গ্রহণ সরবরাহ।

একান্ত সাক্ষাৎকারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন,”বিতরণ কোম্পানি তিতাস কে বলে দেওয়া হয়েছে তাদের বর্তমান সিষ্টেম লস আরো কমাতে হবে, গত কয়েক বছরে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস তাদের সিস্টেম লস অনেকটাই কমিয়ে এনেছে, বর্তমানে তিতাসের সিস্টেম লস ৫ শতাংশ কিন্তু সিস্টেম লস তিন শতাংশের বেশি কাম্য নয়, এজন্য তিতাসের বিতরণ লাইনে নতুন করে মিটার বসানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরো বলেন, তিতাস গ্যাসের লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ রয়েছে, বিশেষ করে বাসা বাড়িতে অবৈধ সংযোগ কাটতে গেলে অনেক সময় তালা বদ্ধ করে পালিয়ে যায় ভবন মালিকরা, তখন তিতাসের পক্ষ থেকে কিছুই করার থাকে না, এজন্য ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করাটা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। আমরা জ্বালানি বিভাগের কাছে তিতাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আসছিলাম, তবে আশার কথা হচ্ছে তিতাসের জন্য সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এখন থেকে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলো গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ সাভার কেরানীগঞ্জ সোনারগাঁ সব এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে। এবং এসব এলাকায় এক একটি দলে তিতাসের পঞ্চাশ জনের অধিক করে জনবল থাকবে যাতে যেদিন যেই এলাকায় অভিযান পরিচালিত হবে সেই এলাকার সমস্ত অবৈধ সংযোগ তুলে আনা যায়। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জ্বালানি খাতে লোকসান কমিয়ে আনতে খুবই যুগোপযোগী ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করেন।

তবে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে ভারতীয়-বিদেশি চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ পন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখন বিএনপি-জামায়াত সেজে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেঘেছে। এদের অনৈতিক কাজ এবং সিস্টেম লসের নামে চুরি ঠেকাতে বিপাকে পড়েছেন। গত ৫ তারিখের পড়ে যেসব ঘটনা ঘছে তা আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তারা করছে। তবে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন কিছুই করার সাহস পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রোবাংলা গতিশীল থাকলে অনেকের ব্যবসা, কারো কারো উপরি আয় বন্ধ হয়ে যাবে, যে কারণে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে দেশী-বিদেশি চক্র সব সময় সক্রিয়। পেট্রোবাংলার যে কোনো ভালো কাজ বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং দক্ষ কর্মকর্তাদের এখানে থিতু হতে দেওয়া হয়নি। মাসের পর মাস এই চক্রটি দেশের খনিজ সম্পদ নষ্ট করছে এবং একটি বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়া তদবীর চালিয়ে আসছেন। আমি যোগদানের পড়ে এসব চুরি বন্ধ করেছি। এ কারণে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। আমি দেশের সম্পদ রক্ষায় কাজ করছি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন