ঢাকা ১২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগ

বিতর্কের মুখে পড়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোড সময় : ১০:৩৬:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৬১৭ বার পড়া হয়েছে

সদ্যগঠিত ডেমরা থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত অছাত্র ও বিবাহিত নেতৃত্ব থাকায় থানা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে নতুন ঘোষিত এ কমিটি নিয়ে ডেমরা থানাধীন সকল ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বিস্মিত বলে অভিযোগ করেছেন। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বিতর্কের মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ ডেমরা ও আশাপাশের থানা—ওয়ার্ড পর্যায়ের ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতৃবৃন্দের। এক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী অংগ সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ বলছেন, প্রায় ৪ বছর পর ২০০ থেকে ৩০০ প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন ডেমরা থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর কমিটিতে থাকা নেতৃবৃন্দ যে শতভাগ ক্লিন থাকবে এমন নাও হতে পারে। তবে যাদের থানা কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের না জানা সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত যদি কোন অপরাধ প্রমান হয় তাহলে অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, মো. মহিবুর রহমান ভূইয়া রনিকে সভাপতি ও আকরামুল হক সাগরকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজধানীর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সোমবার (১৮সেপ্টেম্বর) দুপুরে যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মীসভা শেষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নতুন কমিটিতে সহ—সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রিয়াজুল ইসলাম মুন্না।

এদিকে ডেমরায় এক যুবককে কুপিয়ে জখমের অপরাধে জেলে থেকেও নতুন কমিটিতে সহ—সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রিয়াজুল ইসলাম মুন্না। এছাড়াও রয়েছেন আবু বক্কর সিদ্দিক, সুজন হক, রাতুল আহমেদ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল রায়হান তালুকদার, সাকিব হোসেন শান্ত, নওশাদ রায়হান সিফাত। সাংগঠনিক সম্পাদক এ এস এম ইব্রাহিম ভুইয়া শাওন, মিনালউর রহমান রাফি, মাইনুল হাসান পরান, মো. হৃদয় হোসেন ও সালমান ঢালী।

এছাড়া একই থানার ৬৮ ও ৬৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬৮ নং ওয়ার্ডে সভাপতি করা হয়েছে মো. মাহিন খান, সাধারণ সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম জিহাদকে। আর ৬৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিফাত ও জাহিদুল ইসলাম দ্বীপকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ এবং দুই ওয়ার্ড কমিটি পূণাঙ্গ করা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

 

 

থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, নতুন ঘোষণা করা ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মহিবুর রহমান ভূইয়া রনি একজন বিবাহিত ছেলে। মেহরিমা নামে ২ থেকে আড়াই বছর বয়সের তার এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। রনি পড়াশোনা বাদ দিয়েছেন অনেক আগেই। গত কয়েক বছর আগেই তিনি বিয়ে করেছেন। তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই ২৪ নং মাদক মামলার আসামি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক সাগর ডেমরা থানায় দায়ের করা ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারীর ২২ নং মামলার এজাহার নামীয় আসামি। তার বিরুদ্ধে সংগবদ্ধভাবে অন্যের গৃহে অনধিকার প্রবেশ, মারামারি, চুরি ও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই মামলায়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও এলাকায় অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। এদিকে ১ নং সহ—সভাপতি মুন্না বর্তমানে জেলে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় গত ১৭ আগস্ট ও ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলায় বেআইনি জনতাবদ্ধে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে চুরিসহ। এছাড়াও নতুন কমিটির অনেকে বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাস সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানিয়েছেন ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, সদ্যগঠিত ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রনির বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মাদক মামলার সূত্র রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক সাগরের বিরুদ্ধেও ডেমরা থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া সহ—সভাপতি মুন্না বর্তমানে ডেমরা থানায় দায়ের করা মামলায় জেলে অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় দু’টি মামলা রয়েছে।

 

অভিজ্ঞমহলের অভিযোগ,এভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে এমন মামলার আসামি ও বিবাহিতদের নেতৃত্ব বহাল রাখা হয় তাহলে দলের ভাবমূর্তি কোথায় থাকে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শই কতটুকু মানা হলো ? এরা যেহেতু এজাহার ভুক্ত আসামি ও বিবাহিত সহ সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত কাজে জড়িত, তাদের কিভাবে কমিটিতে রাখা হলো এটা বোধগম্য নয়। মেধাবী ও আদর্শবান ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতি করবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অংগ সংগঠনেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে করছেন ডেমরা ও আশাপাশের থানার নবীন—প্রবীন রাজনীতিকরা।

এদিকে নতুন কমিটির প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে পদবঞ্চিত অনেক ছাত্রলীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন, এই ভুয়া কমিটি, পকেট কমিটি মানি না। ছাত্রলীগ আমার লালিত স্বপ্ন শৈশবের উচ্ছ্বাস, যৌবনের প্রথম প্রেম…এই কি প্রেমের পাওনা ছিল ছাত্রলীগ করে? দু’একজন নেতার ঘুঁটিতে নিমিষেই ভেঙ্গে গেল সব স্বপ্ন। প্রিয় বড়ভাই, বন্ধুরা, ছোটভাইরা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

 

এ বিষয়ে সদ্য গঠিত ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রনি ভূইয়া (০১৭১০-০৩২৭৮১) ও সাধারণ সম্পাদক সাগরের (০১৭২৪-২৩৮৭৪৯) মোবাইল নম্বরে একাধিক মোবাইল ফোন থেকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু মোবাইল ফোনে বলেন, ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ১ নং সহ সভাপতিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যদি সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত কোন কার্যকলাপ পাওয়া যায় তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এসব বিষয় আমাদের জানা ছিলনা। তদন্তে এসব অভিযোগের যদি সঠিক প্রমান পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিকভাবেই জরুরী ব্যবস্থা নেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ।

 

ডেমরা থানা ছাত্রলীগের বিতর্কিত নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মনিরুল ইসলাম মনু মোবাইল ফোনে যুগান্তর কে বলেন, আমাদের কাউকে না জানিয়ে এভাবে হঠাৎ করে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে শুনে খুব ব্যথিত হয়েছি। এ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই মামলার আসামি। তাছাড়া সভাপতি অনেক আগেই বিবাহ করেছেন, শুনেছি তার কন্যা সন্তানও রয়েছে। এদিকে সহ-সভাপতি মুন্না জেলে থেকেই পদ পেয়েছে । এভাবে অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধীদের নিয়ে থানা কমিটি ঘোষণা করা মোটেই উচিত হয়নি।

এমপি আরো বলেন, যেহেতু ওই কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে সেহেতু সাংগঠনিক নিয়মে দ্রুত বিতর্কিত এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে মেধাবী ও আদর্শ ছাত্রদের কে নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হোক। যেসব মেধাবী ছাত্রদের গ্রহণযোগ্যতা সমাজে রয়েছে তাদেরকেই কমিটিতে আনা হোক এটিই প্রত্যাশা সকলের

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগ

বিতর্কের মুখে পড়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব

আপলোড সময় : ১০:৩৬:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সদ্যগঠিত ডেমরা থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত অছাত্র ও বিবাহিত নেতৃত্ব থাকায় থানা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে নতুন ঘোষিত এ কমিটি নিয়ে ডেমরা থানাধীন সকল ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বিস্মিত বলে অভিযোগ করেছেন। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বিতর্কের মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ ডেমরা ও আশাপাশের থানা—ওয়ার্ড পর্যায়ের ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতৃবৃন্দের। এক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী অংগ সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ বলছেন, প্রায় ৪ বছর পর ২০০ থেকে ৩০০ প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন ডেমরা থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর কমিটিতে থাকা নেতৃবৃন্দ যে শতভাগ ক্লিন থাকবে এমন নাও হতে পারে। তবে যাদের থানা কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের না জানা সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত যদি কোন অপরাধ প্রমান হয় তাহলে অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, মো. মহিবুর রহমান ভূইয়া রনিকে সভাপতি ও আকরামুল হক সাগরকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজধানীর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সোমবার (১৮সেপ্টেম্বর) দুপুরে যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মীসভা শেষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নতুন কমিটিতে সহ—সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রিয়াজুল ইসলাম মুন্না।

এদিকে ডেমরায় এক যুবককে কুপিয়ে জখমের অপরাধে জেলে থেকেও নতুন কমিটিতে সহ—সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রিয়াজুল ইসলাম মুন্না। এছাড়াও রয়েছেন আবু বক্কর সিদ্দিক, সুজন হক, রাতুল আহমেদ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল রায়হান তালুকদার, সাকিব হোসেন শান্ত, নওশাদ রায়হান সিফাত। সাংগঠনিক সম্পাদক এ এস এম ইব্রাহিম ভুইয়া শাওন, মিনালউর রহমান রাফি, মাইনুল হাসান পরান, মো. হৃদয় হোসেন ও সালমান ঢালী।

এছাড়া একই থানার ৬৮ ও ৬৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬৮ নং ওয়ার্ডে সভাপতি করা হয়েছে মো. মাহিন খান, সাধারণ সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম জিহাদকে। আর ৬৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিফাত ও জাহিদুল ইসলাম দ্বীপকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ এবং দুই ওয়ার্ড কমিটি পূণাঙ্গ করা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

 

 

থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, নতুন ঘোষণা করা ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মহিবুর রহমান ভূইয়া রনি একজন বিবাহিত ছেলে। মেহরিমা নামে ২ থেকে আড়াই বছর বয়সের তার এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। রনি পড়াশোনা বাদ দিয়েছেন অনেক আগেই। গত কয়েক বছর আগেই তিনি বিয়ে করেছেন। তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই ২৪ নং মাদক মামলার আসামি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক সাগর ডেমরা থানায় দায়ের করা ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারীর ২২ নং মামলার এজাহার নামীয় আসামি। তার বিরুদ্ধে সংগবদ্ধভাবে অন্যের গৃহে অনধিকার প্রবেশ, মারামারি, চুরি ও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই মামলায়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও এলাকায় অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। এদিকে ১ নং সহ—সভাপতি মুন্না বর্তমানে জেলে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় গত ১৭ আগস্ট ও ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলায় বেআইনি জনতাবদ্ধে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে চুরিসহ। এছাড়াও নতুন কমিটির অনেকে বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাস সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানিয়েছেন ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, সদ্যগঠিত ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রনির বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মাদক মামলার সূত্র রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক সাগরের বিরুদ্ধেও ডেমরা থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া সহ—সভাপতি মুন্না বর্তমানে ডেমরা থানায় দায়ের করা মামলায় জেলে অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় দু’টি মামলা রয়েছে।

 

অভিজ্ঞমহলের অভিযোগ,এভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে এমন মামলার আসামি ও বিবাহিতদের নেতৃত্ব বহাল রাখা হয় তাহলে দলের ভাবমূর্তি কোথায় থাকে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শই কতটুকু মানা হলো ? এরা যেহেতু এজাহার ভুক্ত আসামি ও বিবাহিত সহ সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত কাজে জড়িত, তাদের কিভাবে কমিটিতে রাখা হলো এটা বোধগম্য নয়। মেধাবী ও আদর্শবান ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতি করবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অংগ সংগঠনেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে করছেন ডেমরা ও আশাপাশের থানার নবীন—প্রবীন রাজনীতিকরা।

এদিকে নতুন কমিটির প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে পদবঞ্চিত অনেক ছাত্রলীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন, এই ভুয়া কমিটি, পকেট কমিটি মানি না। ছাত্রলীগ আমার লালিত স্বপ্ন শৈশবের উচ্ছ্বাস, যৌবনের প্রথম প্রেম…এই কি প্রেমের পাওনা ছিল ছাত্রলীগ করে? দু’একজন নেতার ঘুঁটিতে নিমিষেই ভেঙ্গে গেল সব স্বপ্ন। প্রিয় বড়ভাই, বন্ধুরা, ছোটভাইরা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

 

এ বিষয়ে সদ্য গঠিত ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রনি ভূইয়া (০১৭১০-০৩২৭৮১) ও সাধারণ সম্পাদক সাগরের (০১৭২৪-২৩৮৭৪৯) মোবাইল নম্বরে একাধিক মোবাইল ফোন থেকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু মোবাইল ফোনে বলেন, ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ১ নং সহ সভাপতিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যদি সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত কোন কার্যকলাপ পাওয়া যায় তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এসব বিষয় আমাদের জানা ছিলনা। তদন্তে এসব অভিযোগের যদি সঠিক প্রমান পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিকভাবেই জরুরী ব্যবস্থা নেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ।

 

ডেমরা থানা ছাত্রলীগের বিতর্কিত নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মনিরুল ইসলাম মনু মোবাইল ফোনে যুগান্তর কে বলেন, আমাদের কাউকে না জানিয়ে এভাবে হঠাৎ করে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে শুনে খুব ব্যথিত হয়েছি। এ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই মামলার আসামি। তাছাড়া সভাপতি অনেক আগেই বিবাহ করেছেন, শুনেছি তার কন্যা সন্তানও রয়েছে। এদিকে সহ-সভাপতি মুন্না জেলে থেকেই পদ পেয়েছে । এভাবে অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধীদের নিয়ে থানা কমিটি ঘোষণা করা মোটেই উচিত হয়নি।

এমপি আরো বলেন, যেহেতু ওই কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে সেহেতু সাংগঠনিক নিয়মে দ্রুত বিতর্কিত এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে মেধাবী ও আদর্শ ছাত্রদের কে নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হোক। যেসব মেধাবী ছাত্রদের গ্রহণযোগ্যতা সমাজে রয়েছে তাদেরকেই কমিটিতে আনা হোক এটিই প্রত্যাশা সকলের

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন