ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটে জিম্মি বিটুমিন:প্রকৃত ঠিকাদার বঞ্চিত

মোঃ জানে আলম (কুমিল্লা প্রতিনিধি)
মোঃ জানে আলম (কুমিল্লা প্রতিনিধি)
  • আপলোড সময় : ০২:৫১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৯০৭ বার পড়া হয়েছে

সারাদেশে নতুন সড়কে কার্পেটিং ও মেরামতের গুরুত্বপুর্ণ উপাদান বিটুমিন সরবরাহ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেটকে অতিরিক্ত কমিশন বা লাভের অংশ না দিলে বিটুমিন পাওয়াই অসম্ভব। বিপিসির অধিনস্ত সরকারি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা মেঘনা যমুনা এশিয়াটিক ও ইএলবিএল এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডর কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা এই সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রকৃত ঠিকাদার ও গুটি কয়েক সৎ অফিসারও। সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মামুন (জুয়েল) ও পারভেজ নাম উঠে আসছে। আর এই চক্রের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। র‌্যাবের অভিযানে মাঝে মাঝে এসব সিন্ডিকেটের চোরাই বিটুমিন আটক হলেও মূলহোতারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এই চক্রের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছেনা বলে বলে বিশ্বস্ত একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, আমদানী করা বিটুমিনের তুলনায় ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদিত বিটুমিনের মান অনেক ভালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। কার্যাদেশ দেয়া প্রতিষ্ঠানও এই বিটুমিন ব্যবহারের কথা বলে থাকেন। বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) নির্ধারিত দাম অনেকটা কম থাকায় কতিপয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট করে এই বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ফলে প্রকৃত ঠিকাদারেরা এই বিটুমিন সংগ্রহ করতে গিয়ে সিন্ডিকেটের কারনে বিপাকে পড়েন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা লেনদেন না করলে বিটুমিন পাওয়া সোনার হরিণের মতো স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, বিপিসির বেধে দেয়া দামে আমরা বিটুমিন পাইনা। বিটুমিন পেতে হলে সিন্ডিকেটের সাথে চুক্তি করতে হয়। আবার একটি চক্র আছে যারা সিন্ডিকেটের নিজের লোক তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বা ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করে কার্যাদেশ কিনে নিয়ে বিটুমিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মাধ্যমে অনায়াসে মাল পেয়ে যায়। তারা সেগুলো নিয়ে চড়া দামে ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে। সব কিছু জেনেও এসব চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বিপিসি বা পদ্মা মেঘনা যমুনার মতো প্রতিষ্ঠানের কর্ণদারেরা।
অপর একটি সুত্র জানায়, বিটুমিন সিন্ডিকেট ভাঙ্গা ও পাচার রোধে মাঝে মাঝে অভিযান চালায় র‌্যাব। তারা সফলও হয়, তবে বিটুমিন আটকের সময় যাদের আটক করা হয় তরা মূলত পরিবহন বা দেখাশোনার কাজ করে থাকেন। এসব অভিযানে কখনো মূলহোতা ধরা পড়েনা। তাই সিন্ডিকেটের মূলহোতাদের আটকে র‌্যাবের অভিযান আরো জোরদারের দাবি জানান প্রকৃত ঠিকাদরেরা। সুত্র জানায় আব্দুল্লাহ আল মামুণ ও পারভেজ নামের দুই ব্যক্তি বর্তমানে বিটুমিন সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করছে। তাদের সাথে জড়িৎ রয়েছে আরো অনেকে। ইতিমধ্যে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

র‌্যাবের অভিযানে গত ২ আগস্ট সীতাকুণ্ড থেকে ১৭৯ মেট্রিকটন চোরাই বিটুমিন জব্দ করেছে। চোরাচালান চক্রের সাথে জড়িৎ থাকায় সেই অভিযানে মো. দিদারুল ইসলাম (৩৫), মো. দেলোয়ার হোসেন খান (৪২), কবির (৪২) ও মো. তাজুল ইসলামকে (৬১) আটক করে।
র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার সেমসয় সাংবাদিকদেও জানিয়েছিলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকায় নিজাম উদ্দিন এবং আকবর আলীর জায়গায় কতিপয় লোক অবৈধ বিটুমিন মজুদ করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে তাদেও আটক করা হয়েছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে এসব বিটুমিন ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছিল। বিটুমিন পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যানও জব্দ করা হয়। জব্দকৃত চোরাই বিটুমিনের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। একই বছরের ২ জুন ৫৩ টন চোরাই বিটুমিনসহ চক্রের এক সদস্যকে দক্ষিণ সোনাইছড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের একটি তেলের ডিপো থেকে আটক করা হয়। এছাড়া এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি চোরাই বিটুমিন চক্রের সক্রিয় ৩ সদস্যকে সীতাকুণ্ডের বাংলা বাজার থেকে ১৬ টন বিটুমিনসহ আটক করা হয়। তবে এসব অভিযানেও চক্রের মুলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এব্যপারে জানতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সিন্ডিকেটে জিম্মি বিটুমিন:প্রকৃত ঠিকাদার বঞ্চিত

আপলোড সময় : ০২:৫১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সারাদেশে নতুন সড়কে কার্পেটিং ও মেরামতের গুরুত্বপুর্ণ উপাদান বিটুমিন সরবরাহ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেটকে অতিরিক্ত কমিশন বা লাভের অংশ না দিলে বিটুমিন পাওয়াই অসম্ভব। বিপিসির অধিনস্ত সরকারি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা মেঘনা যমুনা এশিয়াটিক ও ইএলবিএল এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডর কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা এই সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রকৃত ঠিকাদার ও গুটি কয়েক সৎ অফিসারও। সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মামুন (জুয়েল) ও পারভেজ নাম উঠে আসছে। আর এই চক্রের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। র‌্যাবের অভিযানে মাঝে মাঝে এসব সিন্ডিকেটের চোরাই বিটুমিন আটক হলেও মূলহোতারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এই চক্রের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছেনা বলে বলে বিশ্বস্ত একাধিক সুত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, আমদানী করা বিটুমিনের তুলনায় ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদিত বিটুমিনের মান অনেক ভালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। কার্যাদেশ দেয়া প্রতিষ্ঠানও এই বিটুমিন ব্যবহারের কথা বলে থাকেন। বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) নির্ধারিত দাম অনেকটা কম থাকায় কতিপয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট করে এই বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ফলে প্রকৃত ঠিকাদারেরা এই বিটুমিন সংগ্রহ করতে গিয়ে সিন্ডিকেটের কারনে বিপাকে পড়েন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা লেনদেন না করলে বিটুমিন পাওয়া সোনার হরিণের মতো স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, বিপিসির বেধে দেয়া দামে আমরা বিটুমিন পাইনা। বিটুমিন পেতে হলে সিন্ডিকেটের সাথে চুক্তি করতে হয়। আবার একটি চক্র আছে যারা সিন্ডিকেটের নিজের লোক তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বা ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করে কার্যাদেশ কিনে নিয়ে বিটুমিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মাধ্যমে অনায়াসে মাল পেয়ে যায়। তারা সেগুলো নিয়ে চড়া দামে ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে। সব কিছু জেনেও এসব চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বিপিসি বা পদ্মা মেঘনা যমুনার মতো প্রতিষ্ঠানের কর্ণদারেরা।
অপর একটি সুত্র জানায়, বিটুমিন সিন্ডিকেট ভাঙ্গা ও পাচার রোধে মাঝে মাঝে অভিযান চালায় র‌্যাব। তারা সফলও হয়, তবে বিটুমিন আটকের সময় যাদের আটক করা হয় তরা মূলত পরিবহন বা দেখাশোনার কাজ করে থাকেন। এসব অভিযানে কখনো মূলহোতা ধরা পড়েনা। তাই সিন্ডিকেটের মূলহোতাদের আটকে র‌্যাবের অভিযান আরো জোরদারের দাবি জানান প্রকৃত ঠিকাদরেরা। সুত্র জানায় আব্দুল্লাহ আল মামুণ ও পারভেজ নামের দুই ব্যক্তি বর্তমানে বিটুমিন সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করছে। তাদের সাথে জড়িৎ রয়েছে আরো অনেকে। ইতিমধ্যে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

র‌্যাবের অভিযানে গত ২ আগস্ট সীতাকুণ্ড থেকে ১৭৯ মেট্রিকটন চোরাই বিটুমিন জব্দ করেছে। চোরাচালান চক্রের সাথে জড়িৎ থাকায় সেই অভিযানে মো. দিদারুল ইসলাম (৩৫), মো. দেলোয়ার হোসেন খান (৪২), কবির (৪২) ও মো. তাজুল ইসলামকে (৬১) আটক করে।
র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার সেমসয় সাংবাদিকদেও জানিয়েছিলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকায় নিজাম উদ্দিন এবং আকবর আলীর জায়গায় কতিপয় লোক অবৈধ বিটুমিন মজুদ করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে তাদেও আটক করা হয়েছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে এসব বিটুমিন ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছিল। বিটুমিন পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যানও জব্দ করা হয়। জব্দকৃত চোরাই বিটুমিনের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। একই বছরের ২ জুন ৫৩ টন চোরাই বিটুমিনসহ চক্রের এক সদস্যকে দক্ষিণ সোনাইছড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের একটি তেলের ডিপো থেকে আটক করা হয়। এছাড়া এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি চোরাই বিটুমিন চক্রের সক্রিয় ৩ সদস্যকে সীতাকুণ্ডের বাংলা বাজার থেকে ১৬ টন বিটুমিনসহ আটক করা হয়। তবে এসব অভিযানেও চক্রের মুলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এব্যপারে জানতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন