‘বাসে আগুন দিলেই বিকাশে পৌঁছে যেত টাকা’
- আপলোড সময় : ০৯:০৩:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে যাত্রীবেশে বাসে অগ্নিসংযোগের নির্দেশদাতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলে যুগ্ম আহবায়ক আমির হোসেন রকি। তার নেতৃত্বেই বিএনপির কর্মীরা মুগদাপাড়া আইডয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে অগ্নিসংযোগ করে।
রাজধানীতে বাসে আগুন দিলেই পুরস্কার হিসেবে রকি দুষ্কৃতকারীদের ‘পেমেন্ট’ করতেন বিকাশের মাধ্যমে।
সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে ছাত্রদল নেতা রকি ও তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহানকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির একটি দল।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আল আমিন পুলিশের কাছে স্বীকার করে কীভাবে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বাসে আগুন দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আল আমিন বেশকিছু তথ্যও দিয়েছে।
আল আমিন জানিয়েছেন, তার নেতা বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমান। মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিজানসহ তিনজন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলে। পরে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি ইউনিট।
আসাদুজ্জামান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের নেতা আমির হোসেন রকির নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফায় মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সব রশদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করে। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে তারা।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। মিজান তাদের আশ্বস্ত করে, দল ক্ষমতায় আসছে। কোনো সমস্যা হবে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় আল আমিনকে। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য মিজানের বিকাশে ৩ হাজার টাকা পাঠান রকি। পরে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাসও ঘোষণা করেন রকি।
রোববার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পাশাপাশি রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে দুজনকে আটক করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, আমাদের গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আগুন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এটাতে ব্যর্থ হওয়া রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পরে আমরা পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ তাকে গ্রেপ্তার করি।
আসাদুজ্জামান বলেন, ছাত্রদলের নেতা রকির কাছ থেকে আমরা বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি৷ সে কি কি কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য আমরা পেয়েছি। রকি প্রথম দিনের অবরোধে কি পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে সেই ফুটেজ আমরা তার মোবাইল ফোনে পেয়েছি। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি।
তারা আরও একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে, প্রথমদিন অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিতো, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার হিসেবে অগ্নিসংযোগকারীর বিকাশে টাকা পাঠানো হতো। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশদাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা? জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারো নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।