মাদ্রাসা সুপারের কান্ড ১০বছর বয়সে দাখিল পাস: জাল জালিয়াতির মহা কারখানা, রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায়
- আপলোড সময় : ০৭:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩২৭ বার পড়া হয়েছে
নোয়াখালীর সেনবাগে জাল জালিয়াতির মহা কারখানা হিসেবে চিহ্নিত কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছ।
এরকম চাঞ্চল্যকর তথ্য উপাত্ত জানতে ও অনুসন্ধান করতে গিয়ে থমকে যায় সাংবাদিক ! কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে এলো সাপ। ইসলামের লেবাসধারী এই মাও. আবদুল কুদ্দুছের জন্ম তারিখ ০১/০৩ /১৯৬৪ ইং সালে তিনি দাখিল পরীক্ষা পাস করেছেন ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে নাকি এ সনদ দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ও অভিভাবক সহ সকলের দৃষ্টি ঐ মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছের উপর। তাঁরা জানতে চায় কী ভাবে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১০ বছর বয়সের একজন ছাত্র দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ? মাদ্রাসা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে সেনবাগের কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অভিভাবক সহ আমজনতা! শুধু এরকম সনদ দিয়ে মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দীর্ঘদিন জাল জালিয়াতির মহা কারখানায় নামে বেনামে বিভিন্ন রেজুলেশন, প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের নাম দিয়ে রেজুলেশন লিখা এবং মাদ্রাসায় ঢুকতে দেয়ালের উপরে লিখা প্রতিষ্ঠাতা: মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর সাইনবোর্ড সকলের নজরে পড়ে। এরকম বিভিন্ন অনিয়ম কে নিয়ম করে নিজের ইচ্ছে মতো মাদ্রাসা পরিচালনা করে গত ২৯/০২/২০২৪ ইং তারিখে অবসরে যান। এক শিক্ষকের আবেদনে প্রতিষ্ঠাতার বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তফা হোসেন গত ০২/০৭/২০২৪ইং তারিখে ১২টি রেজুলেশন পর্যালোচনায় মাও. আবদুল কুদ্দুছ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার প্রমান না পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্পষ্টভাবে পত্র দিয়ে জানিয়ে দেন ঐ সুপার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নয়। সুপার জালিয়াতি করে ম্যানেজিং কমিটির অগোচরে রেজুলেশন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা সাজিয়ে এ মাদ্রাসা কে লুটেপুটে খাওয়ার পায়তারা করছেন। এটা তার বড় ধরনের অপরাধ নয় কী ? এরকম জালিয়াতকারী শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? শিখবে জালিয়াতির ফাঁকফুকুর! তারপরও দীর্ঘদিন মাদ্রাসার সুপার পদে দায়িত্ব পালন করার সময় কালে সুপারের নিজ হাতের লেখা একখানা রেজুলেশন, পত্র বা নোটিস মাদ্রাসার রেকর্ডে নেই। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সুপার পদে থাকা অবস্থায় কখনো চক, বোর্ড ব্যবহার করেন নি। সিনিয়র শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকের বর্ণনামতে। এতে বুঝা যায় যে তিনি কামিল পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন কী না? নাকি অন্যের দ্বারা ফক্সি দিয়ে অর্জিত সার্টিফিকেট ? এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
আরো বেরিয়ে এলো বর্তমানে স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব আলী মিয়াজী’র বিরুদ্ধে বিগত ০১/০৩/২০১০ইং তারিখে মিথ্যা বানোয়াট মূলক রেজুলেশন করে কিন্তু এসম্পর্কে ঐ সময়ে মোঃ আইয়ুব আলী কিছুই জানেন না। পরে কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব আলী মিয়াজী জানতে পেরে গত ২৪/০৬/২০২৪ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট মানহানীর সুবিচারের জন্য আবেদন করেন। এভাবে নীল নক্সা করে রেখেছে ঐ সুপার, যেন ভবিষ্যতে প্রভাবশালী কেউই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হতে না পারে!
এব্যাপারে কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব আলী মিয়াজী কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন – আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মাও. আবদুল কুদ্দুছ রেজুলেশন করেছে কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা আপনার সম্পর্কে এমন কোন রেজুলেশন করিনি। এব্যাপারে আইয়ুব আলী মিয়াজীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে রেজুলেশন করায় মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, এ মাদ্রাসাটির জায়গা দিয়েছেন কাদরার আবু তাহের ভূঁঞার ভাই রফিক ভূঁঞা, তারপরও এলাকার বিভিন্ন দানবীর ব্যক্তিদের দান-অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠাতা হন? সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এরকম দূর্নীতিবাজ ও জাল জালিয়াতকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
বিগত ২৩/১১/২০০৬ ইং সালে ঐ সুপারের ছেলে রিয়াদ – কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ সানা উল্যাহ বিএসসি কে প্রাণ নাশের হুমকি ও অশোভন আচরণের কারণে সুপার নিজে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকগণের উপস্থিতিতে ছেলের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে লিখিত মুচলেকা দেন, মাদ্রাসার ব্যাপার তার ছেলে রিয়াদ ভবিষ্যতে কোন শিক্ষকের সাথে এমন আচরণ আর করবে না। এরপরও কীভাবে ১৫/০৬/২০২২ তারিখে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে ঐ সুপারের ছেলে মোঃ আবদুল্লাহিল মাসুম প্রকাশ রিয়াদ কে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়?
জালিয়াতির মহাকান্ডে আরো বেরিয়ে এলো সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা থেকে ফক্সি পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় ঐ সুপারকে ২০১২ সালের ১৪/০২/২০১২ ইং তারিখে দাখিল পরীক্ষায় ( নুরুন নাহার এর পরিবর্তে আছমা আক্তার কে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় ) সেনবাগ ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সহ হাতে নাতে ধরে সেনবাগ থানায় ১৬/০২/২০১২ ইং তারিখে ১৭ নং মামলায় ধারা ৪২০,৪৬৫,৪৬৭,৪৬৮,৪৭১ ও ১৯৭ দঃবিঃ তৎসহ ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনের ৬,১২ ও ১৩ ধারায় মামলা দেয়া হয়। মামলার বাদী ছিলেন, তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুর রহিম।
অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা গেলো নিজ মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পর তার মেয়ের হাজিরা খাতায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ০৭ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত জাল স্বাক্ষর দিয়ে উপস্থিত দেখিয়ে এমপিও’র সরকারি বেতন গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষককে তিনি রীতিমতো বিভিন্ন হুমকি দমকীর মাধ্যমে
কোণঠাসা করতে গিয়ে তার মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা রজু করবে। ঐ শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে আবেদন করার পরও তাঁকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে জেলের ঘানি টানাবে বলে এখনো হুমকি দমকী দিয়ে যাচ্ছে ঐ সুপারের ছেলে রিয়াদ। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদেরকেও দেখে নেয়ার হুমকি ও মামলা হামলা করবে বলে রিপোর্ট প্রকাশে বাধাগ্রস্হ করে যাচ্ছে এবং ঐ সুপারের জামাতা জাকির হোসেন এনটিভির অনলাইন ডেক্সে ঢাকায় কর্মরত কিন্তু জাকির হোসেন অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদককেও মামলা হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক জাল জালিয়াতির অনুসন্ধানে বাধাগ্রস্থ করছে।
গত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সেনবাগ পৌরসভার মেয়র আবু নাছের ভিপি দুলাল বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারা অবগত আছেন য়ে – আমি শিক্ষা বান্ধব ব্যক্তি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএমসির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালনের ফলশ্রুতিতে কয়েকবার জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত সহ চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ সভাপতির পুরষ্কার প্রাপ্ত হই। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমার পৌরসভায় কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটির অবহেলিত অবস্থা দেখে মাদ্রাসাটির উন্নয়নকল্পে সভাপতি হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করলে মাদ্রাসার সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছ আমাকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে গড়িমসি করার পর স্হানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার প্রেরণের কারণে সভাপতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোনয়ন দেন। সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে মাদ্রাসার সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছ ম্যানেজিং কমিটির সভা সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে আমি স্বাক্ষর করি। আমি যখন ব্যস্ত থাকি, ঠিক সে সময়ে বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসে,অনেক সময় পড়ে দেখার সময় থাকে না। বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে দেই। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ নির্বাচনের জন্য মাদ্রাসার ভোটার তালিকা প্রণয়ন কালে মাও. আবদুল কুদ্দুছ নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা ভোটার দাবি করলে, এক শিক্ষকের আবেদনে আপনারা সাংবাদিক মহল সকল বিষয়ে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে উনার লেবাসধারীর আড়ালে জাল জালিয়াতির ফাঁকফুকুর। আমার মতে এই মাও. আবদুল কুদ্দুছ দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতির রোল মডেল। যেহেতু সুপার মাদ্রাসা কাগজপত্র স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসে,ঐ সকল কাগজপত্রের মাঝে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রেজুলেশনে মাও. আবদুল কুদ্দুছ নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে,যা আমি ইতোপূর্বে জানি নাই। সাংবাদিক ভাইদের নিকট থেকে ও রেজুলেশনে কপি দেখে আমি রীতিমতো বিশ্বাস করতে পারছি না- ইসলামের এই লেবাসধারী মাও. আবদুল কুদ্দুছ আসলে একজন দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতকারী ব্যক্তি। আপনারা জানেন আমি কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার পূর্বে ২০১২ সালে ফক্সি পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পাশা ( বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার) হাতেনাতে মাও. আবদুল কুদ্দুছ কে ধরে- তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুর রহিম বাদী হয়ে মাও.আবদুল কুদ্দুছের বিরুদ্ধে মামলা দেন।
আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতকারী মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
এ প্রতিবেদক মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি।