ঢাকা ০২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর প্রথম রাত কেমন হবে

মো:আবু তালহা তারীফ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
মো:আবু তালহা তারীফ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
  • আপলোড সময় : ০৯:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৪১৯ বার পড়া হয়েছে

মৃত্যু থেকে আমরা কেউ বাঁচতে পারবো না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, কুল্লু নাফসিন যা-ইকাতুল মাউত মাউত অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।মৃত্যু খুবই কষ্টের। মৃত্যু হলেই দামী বিছানা ও কষ্টে অর্জিত বাড়ি থেকে নিচে নামিয়ে মসজিদের খাটলিতে শোয়াইয়ে দিবে। মসজিদের মাইকে মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়ে দিবে। আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী এসে শেষবারের মত আমার চেহারাটা একটি নজর দেখতে আসবে। বড়ই পাতা দিয়ে পানি গরম করে সেই পানি দিয়ে শেষ গোছল করাবে। দামী ও রঙিন পোশাক নয়, বাজারের সাদা কাফন শরীরে জরিয়ে দিবে। আমার নামে ডাকা মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ করে সবাই আমাকে লাশ বলে সম্বোধন করবে। ছেলে, মেয়ে ভাই-বোন কাঁদতে থাকবে। আহ্ আমিও এই দৃশ্য দেখতে থাকব। কিন্তু কোন কথা বলার শক্তিই পাব না। জানাজা দিয়ে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি খাটলিতে শুইয়ে আর্তনাদ করতে থাকব৷ যা পৃথিবীর কোন মানুষ শুনবে না। এ ব্যাপারে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে পুরুষেরা তাদের কাঁধে করে নিয়ে যায়, তখন যদি সে নেককার হয়, তাহলে সে বলে, আমাকে জান্নাতে পৌছে দাও। আর যদি বদকার গোনাহগার হয়, তাহলে বলতে থাকে, হায় আফসোস! একে (মৃত ব্যক্তিকে) কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা। মানুষ ব্যতিত সবাই তার আর্তনাদ শুনতে পাবে। আর মানুষ যদি তা মৃত ব্যক্তির এ সব আহ্বান শুনতো তবে তারা বেহুশ হয়ে পড়েতো। বুখারি।

আহ কি নির্মম পরিনতি হবে তখন আমার। কবরের পাশে আমাকে রেখে দুইজন কবিরে নামিয়ে দিবে। তখন ভাবতে থাকব এই দুইজনই আমার সঙ্গী। হঠাৎ তারা আমাকে রেখে উঠে যাবে৷ আমি চিল্লায়ে কাঁদতে থাকব। আত্মীয় -প্রতেবেশী বন্ধুরা সকলেই উপরে রয়েছে। শুধু আমি একাই মাটিতে শুয়ে আছি। ডানে বামে নিচে মাটি। নেই কোন বিচানা কিংবা বালিশ। শুধু একটু আকাশ দেখা যায়। মিনিটের মধ্যেই আকাশও দেখা যাবেনা। বাশ, পাটি ও উপরে মাটি দিয়ে আমার মাটির ঘরটাকে অন্ধকার বানিয়ে দিবে৷ তারা কিছুটা সময় দোয়া করে একা রেখে চলে যাবে৷ দুনিয়ার কোন আলো বাসা কিংবা শব্দ আর শুনতে পারবো না। একা একাই থাকতে হবে ঘন্টা,সপ্তাহ,মাস ও বছরের পর বছর। এমন এক সময়েই আমার কবরের চিহ্নটিও মুছে যাবে।

প্রিয় পাঠক আসুন একটু চিন্তা করি, আমাকে যে কবরে রাখা হবে এই কবরের প্রথম রাতটি কিভাবে কাটাবো? আমার সাথে ফিরিস্তারা কেমন আচরণ করবে? আমার জন্য জান্নাত, জাহান্নাম কোনটি অপেক্ষা করছে? মহান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার পর আমার অবস্থা কেমন হবে? আমার কৃতকর্মের জন্য কি জবাবই দিব? কিভাবেই পুলসিরাত পার হবো আমি? আমার জন্য হাশরের উত্তপ্ত ময়দানে একটু ছায়ার ব্যবস্থা হবে কি? আমি হাউজে কাওসারের পানি পান করার সুযোগ পাব কি?
আসুন নিজেকে একটু প্রশ্ন করি আমি কে? দুনিয়াতে কেন এসেছি? আমার কাজ কি? এরপর কোথায় যাব? আমার গন্তব্য কোথায়? এই প্রশ্ন‌গুলোর ব্যাপারে কি কোনো চিন্তা ভাবনা আছে? আমি কোনো পরিকল্পনা করেছি? অস্থায়ী এই দুনিয়ার জীবনে এই প্রশ্ন গুলো নিজেকে করুন এবং উত্তর খুঁজার চেষ্টা করুন। উত্তর খুজে পেলেই কবরের প্রথম রাতটিতে কোন ভয় থাকবে না। পরিবর্তন হতে হবে নিজেকে। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,’সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে।’ তিরমিজি।
লেখকঃইসলাম বিষয়ক গবেষক

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মৃত্যুর প্রথম রাত কেমন হবে

আপলোড সময় : ০৯:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

মৃত্যু থেকে আমরা কেউ বাঁচতে পারবো না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, কুল্লু নাফসিন যা-ইকাতুল মাউত মাউত অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।মৃত্যু খুবই কষ্টের। মৃত্যু হলেই দামী বিছানা ও কষ্টে অর্জিত বাড়ি থেকে নিচে নামিয়ে মসজিদের খাটলিতে শোয়াইয়ে দিবে। মসজিদের মাইকে মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়ে দিবে। আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী এসে শেষবারের মত আমার চেহারাটা একটি নজর দেখতে আসবে। বড়ই পাতা দিয়ে পানি গরম করে সেই পানি দিয়ে শেষ গোছল করাবে। দামী ও রঙিন পোশাক নয়, বাজারের সাদা কাফন শরীরে জরিয়ে দিবে। আমার নামে ডাকা মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ করে সবাই আমাকে লাশ বলে সম্বোধন করবে। ছেলে, মেয়ে ভাই-বোন কাঁদতে থাকবে। আহ্ আমিও এই দৃশ্য দেখতে থাকব। কিন্তু কোন কথা বলার শক্তিই পাব না। জানাজা দিয়ে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি খাটলিতে শুইয়ে আর্তনাদ করতে থাকব৷ যা পৃথিবীর কোন মানুষ শুনবে না। এ ব্যাপারে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে পুরুষেরা তাদের কাঁধে করে নিয়ে যায়, তখন যদি সে নেককার হয়, তাহলে সে বলে, আমাকে জান্নাতে পৌছে দাও। আর যদি বদকার গোনাহগার হয়, তাহলে বলতে থাকে, হায় আফসোস! একে (মৃত ব্যক্তিকে) কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা। মানুষ ব্যতিত সবাই তার আর্তনাদ শুনতে পাবে। আর মানুষ যদি তা মৃত ব্যক্তির এ সব আহ্বান শুনতো তবে তারা বেহুশ হয়ে পড়েতো। বুখারি।

আহ কি নির্মম পরিনতি হবে তখন আমার। কবরের পাশে আমাকে রেখে দুইজন কবিরে নামিয়ে দিবে। তখন ভাবতে থাকব এই দুইজনই আমার সঙ্গী। হঠাৎ তারা আমাকে রেখে উঠে যাবে৷ আমি চিল্লায়ে কাঁদতে থাকব। আত্মীয় -প্রতেবেশী বন্ধুরা সকলেই উপরে রয়েছে। শুধু আমি একাই মাটিতে শুয়ে আছি। ডানে বামে নিচে মাটি। নেই কোন বিচানা কিংবা বালিশ। শুধু একটু আকাশ দেখা যায়। মিনিটের মধ্যেই আকাশও দেখা যাবেনা। বাশ, পাটি ও উপরে মাটি দিয়ে আমার মাটির ঘরটাকে অন্ধকার বানিয়ে দিবে৷ তারা কিছুটা সময় দোয়া করে একা রেখে চলে যাবে৷ দুনিয়ার কোন আলো বাসা কিংবা শব্দ আর শুনতে পারবো না। একা একাই থাকতে হবে ঘন্টা,সপ্তাহ,মাস ও বছরের পর বছর। এমন এক সময়েই আমার কবরের চিহ্নটিও মুছে যাবে।

প্রিয় পাঠক আসুন একটু চিন্তা করি, আমাকে যে কবরে রাখা হবে এই কবরের প্রথম রাতটি কিভাবে কাটাবো? আমার সাথে ফিরিস্তারা কেমন আচরণ করবে? আমার জন্য জান্নাত, জাহান্নাম কোনটি অপেক্ষা করছে? মহান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার পর আমার অবস্থা কেমন হবে? আমার কৃতকর্মের জন্য কি জবাবই দিব? কিভাবেই পুলসিরাত পার হবো আমি? আমার জন্য হাশরের উত্তপ্ত ময়দানে একটু ছায়ার ব্যবস্থা হবে কি? আমি হাউজে কাওসারের পানি পান করার সুযোগ পাব কি?
আসুন নিজেকে একটু প্রশ্ন করি আমি কে? দুনিয়াতে কেন এসেছি? আমার কাজ কি? এরপর কোথায় যাব? আমার গন্তব্য কোথায়? এই প্রশ্ন‌গুলোর ব্যাপারে কি কোনো চিন্তা ভাবনা আছে? আমি কোনো পরিকল্পনা করেছি? অস্থায়ী এই দুনিয়ার জীবনে এই প্রশ্ন গুলো নিজেকে করুন এবং উত্তর খুঁজার চেষ্টা করুন। উত্তর খুজে পেলেই কবরের প্রথম রাতটিতে কোন ভয় থাকবে না। পরিবর্তন হতে হবে নিজেকে। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,’সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে।’ তিরমিজি।
লেখকঃইসলাম বিষয়ক গবেষক

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন