ঢাকা ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীদের কবর জিয়ারতে বাধা নেই

মো:আবু তালহা তারীফ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
মো:আবু তালহা তারীফ (নিজস্ব প্রতিবেদক)
  • আপলোড সময় : ১১:০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৪০৩ বার পড়া হয়েছে

তাশমিমা আক্তার। মাথায় গোমটা দিয়ে হাতে কোরআন নিয়ে মনটা মলিন করে গম্ভীরতার সাথে বাবার কবরের পাশে দাড়ায়। বেশ কয়েকদিন হল তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। বাবার কবরের পাশে দাড়ানোর সাথে সাথে মনটি নরম হয়ে গেল। । মৃত্যু বাবার জন্য হৃদয় দিয়ে অশ্রু ঝরছে। কবরের পাশে দাড়িয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ করছে। চোখের বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পরছে পবিত্র কোরআন শরীফের পাতায়। মনের আবেগ ও  ভালোবাসা দিয়ে মহান আল্লাহর নিকট দুই হাত তুলে শুরু করে মোনাজাত । হে আল্লাহ মাফ করে দেও আমার প্রিয় বাবাকে। তার কবর নুর দিয়ে পূর্ণ কর। জান্নাতের বিছানা দিয়ে দেও। বিনা হিসাবে জান্নাত দিয়ে দিও বাবজানকে। আমাকে অনেক ভালবাসত বাবজান। আজ নেই। আদর করেনা বাবা আমায়। হে প্রভূ তুমি ভালোবাস আমার প্রিয় বাবজানকে। হে নবী আগলিয়ে রাখিও বাবজানকে। বাবার কবরের পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে তাশমিমা। দুই হাত তুলে আরো বলছে, ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা’। অবশেষে মোনাজাত শেষে বাড়ির দিকে রওনা হলে এলাকার লোকদের নানা প্রশ্ন? নারী হয়ে কবর জিয়ারাত করেছো তুমি। তোমার সাওয়াব হয়নি বরং তোমার পাপ হয়েছে। তোমার জিয়ারতে তোমার বাবার আত্মা শান্তি পায়নি। তুমি তাওবা কর। আর কখনো কবর জিয়ারত যাবেনা । কথাগুলো তাশমিমা আক্তারের হৃদয় কম্পন হল। আত্মায় ব্যাথা পেল। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাশমিমা ভাষা হারিয়ে ফেলল । আমি কি আমার বাবজানের কাছে কি আর যেতে পারবনা । তার কবর দেখে মনকে শীতল করতে পারবোনা। আমি নারী তাই আমাকে কবর জিয়ারতে নিষেধাজ্ঞা। মন মানে না। বাবার প্রতি তার ভালবাসা দেখে অবাক হই। তার মন যেতে চায় বাবার কবর জিয়ারত করতে। মনের সাথে যুদ্ধ করেও সে পারবেনা কবর জিয়ারত বন্ধ করতে। কিন্তু বাধা কেন? আসলেই কি ইসলামে নারীদের কবর জিয়ারত বাধা আছে নারীদের কবর যিয়ারতে? মনে পরে গেল বায়হাকী শরিফে উল্লেখিত হাদিসটি। যেখানে রাসুল (সা:) নারীদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেননি। বরং যেতে বলেছেন। হাদিসটি হল: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি মুলাইকা বলেন,একদিন আয়েশা (রা:) কবরস্থান থেকে আসলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কোথা থেকে আসলেন? উত্তরে বললেন, আমার ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের কাছ থেকে আসলাম। আমি তাকে আবার প্রশ্ন করলাম? রাসুল (সা:) কি কবর জিয়ারতে নিষেধ করেননি। হজরত আয়েশা রা: বলেন হ্যা। প্রথমে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতেক সময়ে কবর যিয়ারতে আদেশ করেছেন। নারীদেও প্রতি প্রিয় নবীর ভালবাসা দেখে মুখে হাসি ফুটল তাশমিমা আক্তারের। এখন আর পৃথিবীর কোন বাধা তাকে আটকিয়ে রাখতে পারবেনা। সে যাবে তার বাবার কবরের কাছে। মন দিয়ে দেখবে তার কবর। চোখ দিয়ে ঝরাবে হৃদয়ের ভালোবাসার পানি।  প্রিয় পাঠক,  আজ তাশমিমা আক্তারের মত হাজারো নারী মনকে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।ইচ্ছা থাকা সত্বেও প্রিয় মানুষটির কবর জিয়ারত করতে পারছেনা। একদল লোক ধর্মের দোহাই দিচ্ছে। বাধা দিচ্ছে নারীদের কবর যিয়ারতে। সদ্য বিবাহিত নারী হঠাৎ স্বামী হারা হয়ে বিধাবা হলে মন চাইলেও প্রিয় স্বারীর কবর দেখতে যেতে পারেনা। কোথায় ঘুমিয়ে আছে প্রিয় মানুষটি। এক নজর দেখে দুই হাত তুলে চেখের পানি ফেলতে পারেনা। মেয়ে তার মৃত বাবা, মা কিংবা ভাই বোনসহ মনের মানুষের কবর জিয়ারত ইচ্ছা থাকলেও সমাজের চাপে তা সম্ভব হয় না। তাই আমাদের সচেতন তখন হতে হবে। পাক পবিত্র হয়ে পর্দা রক্ষা করে প্রিয় মানুষের কবর জিয়ারতে দোষনীয় নয়। কবরের সামনে দাড়িয়ে মন থেকে দোয়া করা যাবে প্রিয় মানুষটির জন্য। কবরের দিকে চাহিয়া হৃদয়কে নরম করে দিয়ে অশ্রু ফেলে দোয়া করতে হবে। এজন্য কবি জসিমউদ্দিীন বলে, এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়,এইখানে তোর মা,কাদছিস তুই? কী করিব দাদু!পরান যে মানেনা। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারীদের কবর জিয়ারতে বাধা নেই

আপলোড সময় : ১১:০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩

তাশমিমা আক্তার। মাথায় গোমটা দিয়ে হাতে কোরআন নিয়ে মনটা মলিন করে গম্ভীরতার সাথে বাবার কবরের পাশে দাড়ায়। বেশ কয়েকদিন হল তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। বাবার কবরের পাশে দাড়ানোর সাথে সাথে মনটি নরম হয়ে গেল। । মৃত্যু বাবার জন্য হৃদয় দিয়ে অশ্রু ঝরছে। কবরের পাশে দাড়িয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ করছে। চোখের বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পরছে পবিত্র কোরআন শরীফের পাতায়। মনের আবেগ ও  ভালোবাসা দিয়ে মহান আল্লাহর নিকট দুই হাত তুলে শুরু করে মোনাজাত । হে আল্লাহ মাফ করে দেও আমার প্রিয় বাবাকে। তার কবর নুর দিয়ে পূর্ণ কর। জান্নাতের বিছানা দিয়ে দেও। বিনা হিসাবে জান্নাত দিয়ে দিও বাবজানকে। আমাকে অনেক ভালবাসত বাবজান। আজ নেই। আদর করেনা বাবা আমায়। হে প্রভূ তুমি ভালোবাস আমার প্রিয় বাবজানকে। হে নবী আগলিয়ে রাখিও বাবজানকে। বাবার কবরের পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে তাশমিমা। দুই হাত তুলে আরো বলছে, ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা’। অবশেষে মোনাজাত শেষে বাড়ির দিকে রওনা হলে এলাকার লোকদের নানা প্রশ্ন? নারী হয়ে কবর জিয়ারাত করেছো তুমি। তোমার সাওয়াব হয়নি বরং তোমার পাপ হয়েছে। তোমার জিয়ারতে তোমার বাবার আত্মা শান্তি পায়নি। তুমি তাওবা কর। আর কখনো কবর জিয়ারত যাবেনা । কথাগুলো তাশমিমা আক্তারের হৃদয় কম্পন হল। আত্মায় ব্যাথা পেল। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাশমিমা ভাষা হারিয়ে ফেলল । আমি কি আমার বাবজানের কাছে কি আর যেতে পারবনা । তার কবর দেখে মনকে শীতল করতে পারবোনা। আমি নারী তাই আমাকে কবর জিয়ারতে নিষেধাজ্ঞা। মন মানে না। বাবার প্রতি তার ভালবাসা দেখে অবাক হই। তার মন যেতে চায় বাবার কবর জিয়ারত করতে। মনের সাথে যুদ্ধ করেও সে পারবেনা কবর জিয়ারত বন্ধ করতে। কিন্তু বাধা কেন? আসলেই কি ইসলামে নারীদের কবর জিয়ারত বাধা আছে নারীদের কবর যিয়ারতে? মনে পরে গেল বায়হাকী শরিফে উল্লেখিত হাদিসটি। যেখানে রাসুল (সা:) নারীদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেননি। বরং যেতে বলেছেন। হাদিসটি হল: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি মুলাইকা বলেন,একদিন আয়েশা (রা:) কবরস্থান থেকে আসলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কোথা থেকে আসলেন? উত্তরে বললেন, আমার ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের কাছ থেকে আসলাম। আমি তাকে আবার প্রশ্ন করলাম? রাসুল (সা:) কি কবর জিয়ারতে নিষেধ করেননি। হজরত আয়েশা রা: বলেন হ্যা। প্রথমে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতেক সময়ে কবর যিয়ারতে আদেশ করেছেন। নারীদেও প্রতি প্রিয় নবীর ভালবাসা দেখে মুখে হাসি ফুটল তাশমিমা আক্তারের। এখন আর পৃথিবীর কোন বাধা তাকে আটকিয়ে রাখতে পারবেনা। সে যাবে তার বাবার কবরের কাছে। মন দিয়ে দেখবে তার কবর। চোখ দিয়ে ঝরাবে হৃদয়ের ভালোবাসার পানি।  প্রিয় পাঠক,  আজ তাশমিমা আক্তারের মত হাজারো নারী মনকে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।ইচ্ছা থাকা সত্বেও প্রিয় মানুষটির কবর জিয়ারত করতে পারছেনা। একদল লোক ধর্মের দোহাই দিচ্ছে। বাধা দিচ্ছে নারীদের কবর যিয়ারতে। সদ্য বিবাহিত নারী হঠাৎ স্বামী হারা হয়ে বিধাবা হলে মন চাইলেও প্রিয় স্বারীর কবর দেখতে যেতে পারেনা। কোথায় ঘুমিয়ে আছে প্রিয় মানুষটি। এক নজর দেখে দুই হাত তুলে চেখের পানি ফেলতে পারেনা। মেয়ে তার মৃত বাবা, মা কিংবা ভাই বোনসহ মনের মানুষের কবর জিয়ারত ইচ্ছা থাকলেও সমাজের চাপে তা সম্ভব হয় না। তাই আমাদের সচেতন তখন হতে হবে। পাক পবিত্র হয়ে পর্দা রক্ষা করে প্রিয় মানুষের কবর জিয়ারতে দোষনীয় নয়। কবরের সামনে দাড়িয়ে মন থেকে দোয়া করা যাবে প্রিয় মানুষটির জন্য। কবরের দিকে চাহিয়া হৃদয়কে নরম করে দিয়ে অশ্রু ফেলে দোয়া করতে হবে। এজন্য কবি জসিমউদ্দিীন বলে, এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়,এইখানে তোর মা,কাদছিস তুই? কী করিব দাদু!পরান যে মানেনা। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন