মর্যাদাপূর্ণ মসজিদে আকসা
- আপলোড সময় : ১০:০৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪২৪ বার পড়া হয়েছে
মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা। ‘আকসা’ শব্দের অর্থ দূরবর্তী। শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- দূরবর্তী মসজিদ। পবিত্র কোরআনে মসজিদুল আকসা শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। মসজিদুল আকসার গুরুত্বপূর্ণ আরে কয়েকটি নাম রয়েছে – আল কুদস, মসজিদে ইলিয়া, সালাম, উরুশলেম ও ইয়াবুস। উল্ল্যেখ যোগ্য। কোরআনে মসজিদুল আকসা নামটি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মসজিদের নামটি মহান আল্লাহ তায়ালা গুরুত্ব দিয়েই পবিত্র কোরআনে লিপিবদ্ধ করেছেন। পবিত্র কোরআনের কয়েক স্থানে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় ভ্রমণ করিয়েছেন, যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১)
মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল৷ সেই সময় মুসলমানগন এই মসজিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায় করতেন। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসু্ল (সা:) মক্কায় পবিত্র কাবার সামনে থাকাবস্থায় মসজিদে আকসার দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায় করেন। মদিনায় হিজরতের পর দীর্ঘ ১৬ মাস সেদিকে
ফিরেই নামাজ আদায় করেন। অতঃপর মুসলিমদের কিবলা পরিবর্তন করে পবিত্র কাবা করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ)
মসজিদুল হারাম নির্মাণের পর পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে স্থাপিত হয়েছে মসজিদুল আকসা। যা আমরা বুখারী শরীফের মাধ্যমে জানতে পারি। আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! প্রথম কোন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম। বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদুল আকসা। বললাম, এ দুইয়ের নির্মাণের মাঝখানে কত পার্থক্য? বললেন, ৪০ বছর।’
কিয়ামতের পূর্ব সময়ে দাজ্জালের আর্বিভাব হবে। তখন দাজ্জাল পৃথিবী জুড়ে তাণ্ডব চালাবে। দাজ্জালের তান্ডবে অনেকেই তার দলে যুক্ত হবে। সেই ফেতনাময় সময়ে পবিত্র মসজিদুল আকসা দাজ্জালের ফেতনা মুক্ত থাকবে। রাসুল (সা.)বলেছেন, দাজ্জাল চারটি মাসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। ১.মাসজিদুল হারাম, ২,মাসজিদুন নববী,৩. মাসজিদুত তুর এবং ৪. মাসজিদুল আকসা। (মুসনাদে আহমাদ)
প্রিয় নবী রাসুল (সা:) এর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর হল পবিত্র মিরাজ। এই মিরাজের সূচনা হয়েছিল মসজিদে আকসায়। এখানে তিনি দুই রাকাত নামাজও আদায় করেছিলেন বলে হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায়। মিরাজের ঘটনা প্রসঙ্গে রাসুল (সা:) বলেছেন, আমার জন্য বোরাক আনা হলো। বোরাক এমন একটি প্রাণী যা গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের । দৃষ্টির শেষ সীমায় তার পদক্ষেপ পড়ে। আমি এতে আরোহণ করে মসজিদুল আকসায় আসলাম। অতঃপর নবীগণ তাদের বাহনগুলো যে খুঁটির সাথে বাঁধতেন, আমি সে খুঁটির সাথে আমার বাহনটি বাঁধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বের হলাম৷ (সহীহ মুসলিম)। রাসুল (স:) এর গুরুত্বপূর্ণ সফর নিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সুরা ইসরা: আয়াত- ০১)।
মসজিদুল আকসা বরকতপূর্ণ এবং ফজিলময় মসজিদ হওয়ায় এই মসজিদে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে দুইশত পঞ্চাশ রাকাত নামাজের সাওয়াব পাওয়া যায়। বিশিষ্ট সাহাবী হজরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা তখন রাসুল (সা:) এর সাথে আলোচনায় ছিলাম,তখন আমরা জানতে চাইলাম: কোন মসজিদটি উত্তম রাসুল (সা:) এর মসজিদ নাকি বায়তুল আকসা মসজিদ? তখন রাসুল (সা:)বললেন, আমার এই মসজিদে একটি নামায সেখানকার চারটি নামাযের চেয়ে উত্তম। (মুসতাদরাক হাকিম)
ক্ষমা ও মাফ চাওয়ার অন্যতম একটি স্থান হলো মসজিদুল আকসা। মসজিদুল আকসায় নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। মসজিদুল আকসা নির্মাণকাজ শেষে হজরত সুলাইমান (আ:) আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি এই মাসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য আসবে, সে যেন গুনাহ থেকে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিলো’।রাসুল (সা:) এই আশা ব্যক্ত করেন যে, মহান আল্লাহ তার নবী সুলাইমান (আ.) এর এই দোয়া কবুল করবেন। (মুসনাদে আহমদ)