ঢাকা ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেরানীগঞ্জে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ভূমিদস্যু জয়নাল বাহিনী,অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

মো: শাহিন (নিজস্ব প্রতিবেদক)
মো: শাহিন (নিজস্ব প্রতিবেদক)
  • আপলোড সময় : ১১:৫০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
  • / ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকার বিশাল এলাকাজুড়ে জয়নালের রাজত্ব, সে রাজ্যে রাতের আঁধারে ভেকু ও নিষিদ্ধ মিনি ড্রেজার দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার মহোৎসব চলে। এতে চোখের সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে শতশত বিঘা কৃষি জমি, ফসলি মাঠ মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও দেখেও না দেখার ভান করছে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, এভাবে মাটি কাটতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে কৃষিজমি। পাশাপাশি গভীর গর্তে শুরু হবে মাটি ধস! আর এ মাটি কাটা ও বিক্রিকে কেন্দ্র করে তার রাজ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল এক দস্যু বাহিনী, যারা মাটি বিক্রির কাঁচা টাকায় বেপরোয়া জীবনযাপন করে। দিনে জুয়া রাতে মাদক সেবনের সঙ্গে চলে নানা অপকর্ম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার অফিস পাড়াখ্যাত কোনাখোলা এলাকার বোয়ালী মৌজার বিশাল এলাকাজুড়ে মাটি কাটার উৎসবে মেতেছে স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা জয়নাল ও তার বাহিনী। দিনের বেলায় সময় সুযোগ বুঝে মাটি কাটলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেকু ও ডজন খানেক ড্রাম ট্রাক দিয়ে শুরু হয় মাটি চুরি। অপহরণ, চাঁদাবাজি, মারামারি, দস্যুতা, হত্যার হুমকি, মাদক, জুয়াসহ দশ মামলার আসামি এই জয়নালের কুকীর্তির শেষ নেই। স্থানীয় জনসাধারণ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এমনকি প্রশাসনও তার কাছে অসহায়। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কোনাখোলা ও তার আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে জমি দখল, কেনা-বেচা, মাদক, জুয়া এমনকি সিএনজি স্টেশনের লাইনও চলে জয়নালের ইশারায়।

গত বছরের একটি ঘটনা কেরানীগঞ্জজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে, রাতের আঁধারে মাটি চুরিতে বাধা দেওয়ায় পুলিশ সদস্যদের মেরে কয়েক দিন জেল খেটেই ছাড়া পেয়ে যায় এই দস্যু নেতা। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকেও একের পর এক অপরাধ সংগঠিত করে পার পেয়ে যাওয়ায় ভয়ে মুখ খোলে না ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে এস এম কামাল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বক্তব্য দিয়ে লাভ নেই, জয়নালের কিছুই হবে না বরং ঝামেলা বাড়বে। তার অপরাধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি আজ আমি এলাকা ছাড়া। জয়নালের কারণে এলাকায় মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে না। অনেক বড় বড় আমলাও তার কাছে শিশু। এলাকাবাসী তার থেকে মুক্তি চায়। শুধু কামাল নয়, তার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু প্রতিষ্ঠিত মানুষ! বাস্তা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা মুন্না হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা দখলে বাধা দেওয়ায় বেধড়ক মারধরের শিকার হন বছর তিনেক আগে। বাস্তা গ্রামের রুপচান সরকারকে (রুপে) কোনাখোলার একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে তার কথিত ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে’ নিয়ে মারধর শেষে খালি ষ্ট্যাম্পে সাইন রেখে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। তা ছাড়া শাক্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির সিরাজুল ইসলাম ছেলে রানাকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয় এবং মাথায় একাধিক জখম করে। কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইও রেহায় পায়নি তার নির্মমতা থেকে। তার নিশানা হয়েছে দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসাও। মাদ্রাসার দেয়াল ভেঙে ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসনের রাস্তা করে দিয়েও হয়েছেন পত্রিকার শিরোনাম সম্প্রতি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার পরিবারের এক সদস্যকে মারধর করে রয়েছেন এলাকা ছাড়া। তবে এলাকা ছাড়া হলেও তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেমে নেই।

গতকাল সোমবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দড়িগাঁও গ্রামের ভেকু ব্যবসায়ী মহসিন ফোন করে জানান, বেলা ৩টার দিকে তেঘরিয়া এলাকায় ভেকু ভাড়া না দেওয়ায় জয়নাল ও তার সহযোগীরা তাকে বেধড়ক মারধর করেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জয়নাল বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি সাধারণ মানুষ, কাজ করে খাই। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির জানান, জয়নাল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি এবং ভূমিদস্যু। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রায় ১২-১৫টি মামলা হয়েছে, যার প্রতিটিতেই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সে নতুন একটি মামলায় পলাতক রয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

কেরানীগঞ্জে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ভূমিদস্যু জয়নাল বাহিনী,অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

আপলোড সময় : ১১:৫০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকার বিশাল এলাকাজুড়ে জয়নালের রাজত্ব, সে রাজ্যে রাতের আঁধারে ভেকু ও নিষিদ্ধ মিনি ড্রেজার দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার মহোৎসব চলে। এতে চোখের সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে শতশত বিঘা কৃষি জমি, ফসলি মাঠ মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও দেখেও না দেখার ভান করছে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, এভাবে মাটি কাটতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে কৃষিজমি। পাশাপাশি গভীর গর্তে শুরু হবে মাটি ধস! আর এ মাটি কাটা ও বিক্রিকে কেন্দ্র করে তার রাজ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল এক দস্যু বাহিনী, যারা মাটি বিক্রির কাঁচা টাকায় বেপরোয়া জীবনযাপন করে। দিনে জুয়া রাতে মাদক সেবনের সঙ্গে চলে নানা অপকর্ম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার অফিস পাড়াখ্যাত কোনাখোলা এলাকার বোয়ালী মৌজার বিশাল এলাকাজুড়ে মাটি কাটার উৎসবে মেতেছে স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা জয়নাল ও তার বাহিনী। দিনের বেলায় সময় সুযোগ বুঝে মাটি কাটলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেকু ও ডজন খানেক ড্রাম ট্রাক দিয়ে শুরু হয় মাটি চুরি। অপহরণ, চাঁদাবাজি, মারামারি, দস্যুতা, হত্যার হুমকি, মাদক, জুয়াসহ দশ মামলার আসামি এই জয়নালের কুকীর্তির শেষ নেই। স্থানীয় জনসাধারণ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এমনকি প্রশাসনও তার কাছে অসহায়। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কোনাখোলা ও তার আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে জমি দখল, কেনা-বেচা, মাদক, জুয়া এমনকি সিএনজি স্টেশনের লাইনও চলে জয়নালের ইশারায়।

গত বছরের একটি ঘটনা কেরানীগঞ্জজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে, রাতের আঁধারে মাটি চুরিতে বাধা দেওয়ায় পুলিশ সদস্যদের মেরে কয়েক দিন জেল খেটেই ছাড়া পেয়ে যায় এই দস্যু নেতা। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকেও একের পর এক অপরাধ সংগঠিত করে পার পেয়ে যাওয়ায় ভয়ে মুখ খোলে না ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে এস এম কামাল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বক্তব্য দিয়ে লাভ নেই, জয়নালের কিছুই হবে না বরং ঝামেলা বাড়বে। তার অপরাধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি আজ আমি এলাকা ছাড়া। জয়নালের কারণে এলাকায় মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে না। অনেক বড় বড় আমলাও তার কাছে শিশু। এলাকাবাসী তার থেকে মুক্তি চায়। শুধু কামাল নয়, তার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু প্রতিষ্ঠিত মানুষ! বাস্তা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা মুন্না হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা দখলে বাধা দেওয়ায় বেধড়ক মারধরের শিকার হন বছর তিনেক আগে। বাস্তা গ্রামের রুপচান সরকারকে (রুপে) কোনাখোলার একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে তার কথিত ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে’ নিয়ে মারধর শেষে খালি ষ্ট্যাম্পে সাইন রেখে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। তা ছাড়া শাক্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির সিরাজুল ইসলাম ছেলে রানাকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয় এবং মাথায় একাধিক জখম করে। কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইও রেহায় পায়নি তার নির্মমতা থেকে। তার নিশানা হয়েছে দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসাও। মাদ্রাসার দেয়াল ভেঙে ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসনের রাস্তা করে দিয়েও হয়েছেন পত্রিকার শিরোনাম সম্প্রতি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার পরিবারের এক সদস্যকে মারধর করে রয়েছেন এলাকা ছাড়া। তবে এলাকা ছাড়া হলেও তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেমে নেই।

গতকাল সোমবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দড়িগাঁও গ্রামের ভেকু ব্যবসায়ী মহসিন ফোন করে জানান, বেলা ৩টার দিকে তেঘরিয়া এলাকায় ভেকু ভাড়া না দেওয়ায় জয়নাল ও তার সহযোগীরা তাকে বেধড়ক মারধর করেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জয়নাল বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি সাধারণ মানুষ, কাজ করে খাই। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির জানান, জয়নাল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি এবং ভূমিদস্যু। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রায় ১২-১৫টি মামলা হয়েছে, যার প্রতিটিতেই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সে নতুন একটি মামলায় পলাতক রয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন