ঢাকা ১২:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“একটি কথা” ছোট প্রবন্ধ:

আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
আবু আজওয়াদ আহমাদ হাশেমী
  • আপলোড সময় : ১১:৩৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২২২ বার পড়া হয়েছে

“একটি কথা”
(এক)
একটি কথা। একটি কথা একজন মানুষকে সম্মানিত করে, আবার একটি কথা একজন মানুষকে অপমানিত করে। একটি কথা মানুষকে বন্ধুতে পরিণত করে, আবার একটি কথা মানুষকে শত্রæ বানায়। একটি কথার বিশ্বাস ও উচ্চারণে মানুষ মুসলিমে পরিণত হয়, আবার একটি কথার অস্বীকারে মানুষ কাফের বা মুনাফিকে পরিণত হয়।
একটি কথায় মানুষ আনন্দিত হয়, আবার একটি কথায় মানুষ অনেক কষ্ট পায়। একটি কথার দ্বারা অপরিচিত ব্যাক্তির সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়, আবার একটি কথার দ্বারা অনেক সময় নিকটাত্মীয়ের মাঝেও সম্পর্কের ফাটল ধরে। একটি কথার উক্তি দিয়ে মানুষ সমাজে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে, আবার কখনো একটি কথার উক্তিতে মানুষ সমাজে চির ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যায়।
কখনো মানুষের একটি কথা মহামূল্যবান হয়ে যায়, যা সমাজের মানুষ ইতিহাসের সোনালী পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখে। আবার একটি কথা মানুষ নিমিষেই ভুলে যায়।
একটি কথার উচ্চারণে আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশি হন এবং রহমত নাযিল করেন, আবার একটি কথার দ্বারা আল্লাহ বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান।
একটি কথার উচ্চারণে দু’জন অপরিচিত ব্যক্তির মাঝে বিবাহ সংঘঠিত হয় এবং মূহুর্তেই সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়, আবার একটি কথায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। একটি কথা জান্নাতের পথ সুগম করে, আবার একটি কথা মানুষকে জাহান্নামী বানায়।
একটি কথার কারণে কখনো কখনো জেল খাটতে হয়, একটি কথার দ¦ারা কেহ আবার দেশ প্রেমিক হিসেবে সকলের কাছে চির স্মরনীয় হয়ে থাকতে পারে। একটি কথার দ্বারা কখনো অনেক বড় উপকার হয়, আবার একটি কথা কখনো বিরাট ক্ষতির কারণ হয়। একটি কথার দ্বারা প্রেম-ভালোবাসা তৈরি হয়, আবার একটি কথা মনোমালিন্যের কারণ হয়ে দাড়ায়।
একটি কথার দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়, আবার একটি কথার দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় ভেঙ্গে যায়। আরবী প্রবাদে আছে- তীরের আঘাতের প্রতিষেধক আছে কিন্তু কথার আঘাতের কোন প্রতিষেধক নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-“মান সাকাতা নাজা” অর্থাৎ যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়। তাই একটা কথা বলার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

(দুই)
একটি কথা সবার সর্বদা মনে রাখা উচিৎ আর তা হল- “মৃত্যু”। একটি কথার দ্বারা জিহŸাকে সর্বদা ভিজিয়ে রাখতে হয় তা হল- “আল্লাহর জিকির”। একটি কথা হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করলে একজন মানুষ একনিষ্ঠ মুসলিমে পরিণত হয় তা হল- “কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ” অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
একটি কথার দ্বারা নামাজ শুরু করতে হয় তা হল- “তাকবীর” অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলা। একটি কথা দিয়ে নামাজ শেষ করতে হয় তা হল- “তাছলীম” অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম বলা। একটি কথার পারষ্পারিক আদান-প্রদানে মানুষের মাঝে সু-সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় তা হল- “সালাম” অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম বলা।
একটি কথা দিয়ে আল্লাহ পাক সমগ্র পৃথিবী তথা আরশ-কুরছি-লৌহ-কলম সৃষ্টি করেছেন তা হল- “কুন” অর্থাৎ হও। আবার আল্লাহ পাকের একটি নির্দেশে মহাপ্রলয় সংঘঠিত হবে। একটি কথা দিয়ে সকল সৃষ্টিকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে তা হল- “কুম” অর্থাৎ দাড়াও। একটি কথাই জান্নাতের অধিবাসীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে তা হল- সালাম, সালাম। আবার একটি কথা জাহান্নামীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে তা হল- তোমাদের অপকর্মের দরূন শাস্তি গ্রহন করতে থাক।
আমাদের একটি কথাও কালের গর্ভে হারিয়ে যায় না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফেরেস্তাগণ সংরক্ষন করে থাকেন। পবিত্র কুরআনের একটি কথা , যেখানে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “মা ইয়ালফিজু মিন কওলিন ইল্লা লাদাইহি রাকিবুন আতিদ” । অর্থাৎ যে কোন কথাই উচ্চারণ করা হোক না কেন, তা সংরক্ষন করার জন্য রয়েছে সদা প্রস্তুতশীল প্রহরী।
যেহেতু একটি কথা দামী ও মূল্যবান এবং তা সংরক্ষন করা হয়, সেহেতু আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ হবে একটি কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক যতœবান, সচেতন, চিন্তাশীল, দূরদর্শী হওয়া। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
– সমাপ্ত –

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

“একটি কথা” ছোট প্রবন্ধ:

আপলোড সময় : ১১:৩৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

“একটি কথা”
(এক)
একটি কথা। একটি কথা একজন মানুষকে সম্মানিত করে, আবার একটি কথা একজন মানুষকে অপমানিত করে। একটি কথা মানুষকে বন্ধুতে পরিণত করে, আবার একটি কথা মানুষকে শত্রæ বানায়। একটি কথার বিশ্বাস ও উচ্চারণে মানুষ মুসলিমে পরিণত হয়, আবার একটি কথার অস্বীকারে মানুষ কাফের বা মুনাফিকে পরিণত হয়।
একটি কথায় মানুষ আনন্দিত হয়, আবার একটি কথায় মানুষ অনেক কষ্ট পায়। একটি কথার দ্বারা অপরিচিত ব্যাক্তির সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়, আবার একটি কথার দ্বারা অনেক সময় নিকটাত্মীয়ের মাঝেও সম্পর্কের ফাটল ধরে। একটি কথার উক্তি দিয়ে মানুষ সমাজে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকে, আবার কখনো একটি কথার উক্তিতে মানুষ সমাজে চির ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যায়।
কখনো মানুষের একটি কথা মহামূল্যবান হয়ে যায়, যা সমাজের মানুষ ইতিহাসের সোনালী পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখে। আবার একটি কথা মানুষ নিমিষেই ভুলে যায়।
একটি কথার উচ্চারণে আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশি হন এবং রহমত নাযিল করেন, আবার একটি কথার দ্বারা আল্লাহ বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান।
একটি কথার উচ্চারণে দু’জন অপরিচিত ব্যক্তির মাঝে বিবাহ সংঘঠিত হয় এবং মূহুর্তেই সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়, আবার একটি কথায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। একটি কথা জান্নাতের পথ সুগম করে, আবার একটি কথা মানুষকে জাহান্নামী বানায়।
একটি কথার কারণে কখনো কখনো জেল খাটতে হয়, একটি কথার দ¦ারা কেহ আবার দেশ প্রেমিক হিসেবে সকলের কাছে চির স্মরনীয় হয়ে থাকতে পারে। একটি কথার দ্বারা কখনো অনেক বড় উপকার হয়, আবার একটি কথা কখনো বিরাট ক্ষতির কারণ হয়। একটি কথার দ্বারা প্রেম-ভালোবাসা তৈরি হয়, আবার একটি কথা মনোমালিন্যের কারণ হয়ে দাড়ায়।
একটি কথার দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়, আবার একটি কথার দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় ভেঙ্গে যায়। আরবী প্রবাদে আছে- তীরের আঘাতের প্রতিষেধক আছে কিন্তু কথার আঘাতের কোন প্রতিষেধক নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-“মান সাকাতা নাজা” অর্থাৎ যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়। তাই একটা কথা বলার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

(দুই)
একটি কথা সবার সর্বদা মনে রাখা উচিৎ আর তা হল- “মৃত্যু”। একটি কথার দ্বারা জিহŸাকে সর্বদা ভিজিয়ে রাখতে হয় তা হল- “আল্লাহর জিকির”। একটি কথা হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করলে একজন মানুষ একনিষ্ঠ মুসলিমে পরিণত হয় তা হল- “কালিমায়ে তাইয়্যেবাহ” অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
একটি কথার দ্বারা নামাজ শুরু করতে হয় তা হল- “তাকবীর” অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলা। একটি কথা দিয়ে নামাজ শেষ করতে হয় তা হল- “তাছলীম” অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম বলা। একটি কথার পারষ্পারিক আদান-প্রদানে মানুষের মাঝে সু-সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় তা হল- “সালাম” অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম বলা।
একটি কথা দিয়ে আল্লাহ পাক সমগ্র পৃথিবী তথা আরশ-কুরছি-লৌহ-কলম সৃষ্টি করেছেন তা হল- “কুন” অর্থাৎ হও। আবার আল্লাহ পাকের একটি নির্দেশে মহাপ্রলয় সংঘঠিত হবে। একটি কথা দিয়ে সকল সৃষ্টিকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে তা হল- “কুম” অর্থাৎ দাড়াও। একটি কথাই জান্নাতের অধিবাসীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে তা হল- সালাম, সালাম। আবার একটি কথা জাহান্নামীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে তা হল- তোমাদের অপকর্মের দরূন শাস্তি গ্রহন করতে থাক।
আমাদের একটি কথাও কালের গর্ভে হারিয়ে যায় না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফেরেস্তাগণ সংরক্ষন করে থাকেন। পবিত্র কুরআনের একটি কথা , যেখানে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “মা ইয়ালফিজু মিন কওলিন ইল্লা লাদাইহি রাকিবুন আতিদ” । অর্থাৎ যে কোন কথাই উচ্চারণ করা হোক না কেন, তা সংরক্ষন করার জন্য রয়েছে সদা প্রস্তুতশীল প্রহরী।
যেহেতু একটি কথা দামী ও মূল্যবান এবং তা সংরক্ষন করা হয়, সেহেতু আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ হবে একটি কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক যতœবান, সচেতন, চিন্তাশীল, দূরদর্শী হওয়া। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
– সমাপ্ত –

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন